আমাদের আজকের আলোচনা বিষয় – বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি ও মাইনাস টু’র অপপ্রয়াস। যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও নির্বাচিত দলিল এর একটি অংশ।
বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি ও মাইনাস টু’র অপপ্রয়াস
সেনাসমর্থিত এই নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থার সুযোগে ঢালাওভাবে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন ও নির্যাতনের পথ গ্রহণ করে। শুরু হয় বিরাজনীতিকরণের নামে প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসন। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকে।
কেবল রাজনীতিবিদই নয়, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী, সাধারণ দোকানদার, ফেরিওয়ালা এবং ছাত্রসমাজ হয় নির্যাতন-নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানালেও, তারা তা উপেক্ষা করে। সংবিধান-বহির্ভূত কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত করা হয়।
ইতোমধ্যে প্রচার করা হয় মাইনাস টু ফর্মুলা। কার্যত বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্য থেকেই এই তত্ত্ব হাজির করা হয়। বিদেশ গমন করলে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা ভয়-ভীতি-নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলেন। ফলে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। মাথা উঁচু করে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু গ্রেফতার নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং সরকারি কার্যক্রমের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরায় এর কিছুদিন পরেই ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই কোনো পরোয়ানা ও অভিযোগ ছাড়াই বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। দায়ের করা হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। নির্জন বন্দী অবস্থায় তার ওপর চালানো হয় মানসিক নির্যাতন, এমনকি তার জীবন সংশয়ও দেখা দেয়।
সেনাসমর্থিত এই সরকারের সময়ে মাইনাস টু ফর্মুলা কার্যকর করা, বড় রাজনৈতিক দলে ভাঙন সৃষ্টি, সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সহযোগিতায় একাধিক ব্যক্তির নতুন রাজনৈতিক দল- কিংস পার্টি গঠনের উদ্যোগ, এমনকি সেনাবাহিনী প্রধানের রাষ্ট্রপতি হওয়ার মতো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক ধারাকেই বিপন্ন করে তোলে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ণ রাখা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবিতে সারাদেশে জনমত গড়ে তোলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার একপর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং হতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে থাকে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বক্স ব্যবহার করা হয়। নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক সংস্থা পুনর্গঠিত হয়। নির্বাচনী আইন ও রাজনৈতিক দলবিধিতেও ইতিবাচক সংস্কার/সংশোধনী আনা হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংসদের প্রায় নয়-দশমাংশ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিনবদলের সনদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় দেশবাসী। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার শপথ গ্রহণ করে। সংকটজাল ছিন্ন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা হয় অবারিত।
আরও দেখুনঃ