১৯ মার্চ ১৯৭১ – তৃতীয় বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

১৯ মার্চ ১৯৭১ | তৃতীয় বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

১৯ মার্চ ১৯৭১

স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত চেষ্টা এবং অজস্র ঘটনা। এখানে রইল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্তেকটি দিনের বিবরণ।

১৯ মার্চ ১৯৭১

তৃতীয় বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর

 

বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর
বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর

 

এক দিন বিরতির পর ১৯ মার্চ সকালে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা বসে প্রেসিডেন্ট ভবনে। একান্ত এ আলোচনায় তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা কথা হয়।

বৈঠক শেষে শেখ মুজিব নিজ বাসভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পরদিন সকালে আবার বৈঠক হবে। তবে সে বৈঠক একান্ত হবে না। দলের শীর্ষ নেতারা তাঁর সঙ্গে থাকবেন। এর আগে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে তাঁর দলের ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা আলোচনায় বসবেন।

একজন বিদেশি সাংবাদিক জানতে চান, মানুষকে সব সময় ‘জয় বাংলা’ বলে সম্ভাষণ জানানোর কারণ কী। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি মুসলমান। সকালে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করার পরই আমি জয় বাংলা বলি। মৃত্যুর সময় আমি আল্লাহর নাম নিয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে ইহধাম থেকে বিদায় নিতে চাই।’

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের সে বৈঠকটি বসে। তাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।

অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত

এই দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা ওড়ানো অব্যাহত থাকে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশজুড়ে স্বাধীনতার দাবিতে সভা-শোভাযাত্রা চলে। বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বাদ জুমা শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত হয়।

 

মুক্তিযুদ্ধ

 

সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে ন্যাপ প্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় এসে অযথা সময় নষ্ট করছেন। তাঁর বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা অর্পণ না করে পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। জেনারেল ইয়াহিয়ার মনে রাখা উচিত, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার তাঁর নেই।

 

সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ২০, জয়দেবপুরে কারফিউ

একদিকে বৈঠক অব্যাহত রয়েছে, অন্যদিকে অসহযোগ আন্দোলনও চলছে। অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে এই দিনে জয়দেবপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় মানুষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় মানুষ খবর পায়, পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একদল সেনা জয়দেবপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ির সেনানিবাসে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করতে আসবে। খবরে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বেলা আড়াইটার দিকে হাজার বিশেক মানুষ জয়দেবপুর রেলগেটের কাছে গাড়ি এবং অন্য ভারী জিনিসপত্র ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

অন্যান্য সড়কেও জনতা ব্যারিকেড দেয়। এ সময় জয়দেবপুর এবং আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়। ঘটনার পর সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত জয়দেবপুরে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

২ মার্চ ১৯৭১ সর্বাত্মক হরতাল ঢাকায় 1 ১৯ মার্চ ১৯৭১ - তৃতীয় বৈঠক ইয়াহিয়া ও মুজিব এর | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

এ খবর ঢাকায় এসে পৌঁছালে নগরবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। হাজার হাজার মানুষ লাঠিসোঁটা ও বর্শা-বল্লম নিয়ে রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের সামনে সমবেত হয়। শেখ মুজিব সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, শক্তিই প্রয়োগ করে বাঙালির দাবি নস্যাৎ করা যাবে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা অস্ত্রের জোরে বাঙালিদের শাসন করতে চেয়ো না। শক্তি প্রয়োগ করে আর বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান চাই।’

ভুট্টোর হুমকি

পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি গণ-আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে তাঁর দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ভুট্টো বলেন, পিপলস পার্টিকে ক্ষমতার হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র হলে তিনিও চুপ করে বসে থাকবেন না।

জুলফিকার আলী ভুট্টো

 

আরও দেখুন…

 

Leave a Comment