১৩ মার্চ ১৯৭১ – খেতাব বর্জন শিল্পী ও রাজনীতিকদের | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস : স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত চেষ্টা এবং অজস্র ঘটনা। এখানে রইল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্তেকটি দিনের বিবরণ।
১৩ মার্চ ১৯৭১
খেতাব বর্জন শিল্পী ও রাজনীতিকদের
দেশ উত্তাল। সরকারি-বেসরকারি সব কাজকর্ম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলা অব্যাহত ছিল। চলমান অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার দেওয়ানি-ফৌজদারি আদালতসহ সব সরকারি ও আধা সরকারি অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে দিনভর অবিরাম চলে সভা-শোভাযাত্রা। ৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে এই দিনেও গড়ে উঠেছে সংগ্রাম কমিটি।
সকালে ঢাকার রমনা পার্কে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার অদূরে শীতলক্ষ্যা নদীতে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে বের হয় দীর্ঘ নৌ মিছিল।
চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন এবং সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল হাকিম পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব ও পদক বর্জন করেন।
অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে উমরতুল ফজলের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামে নারীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বাংলাদেশের মানুষের পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিলাসদ্রব্য বর্জন ও কালো ব্যাজ ধারণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ভৈরবে এক জনসভায় ন্যাপপ্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, পূর্ব বাংলা এখন বস্তুত স্বাধীন। জাতি একটি পূর্ণাঙ্গ সরকার গঠনের অপেক্ষায় আছে।
কূটনীতিকদের মধ্যে আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ছিল। ঢাকার জাতিসংঘ দপ্তর ও পশ্চিম জার্মান দূতাবাসের কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার ২৬৫ জন নাগরিক বিশেষ বিমানে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
পাকিস্তানি নেতাদের তৎপরতা
লাহোরে জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ঠ পাঁচটি দলের পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা একটি সভায় মিলিত হয়ে দ্রুত সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
ওয়ালি ন্যাপের সভাপতি খান আবদুল ওয়ালি খান এবং ন্যাপ নেতা গাউস বক্স বেজেনজো সকালে করাচি থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ন্যাপপ্রধান জানান, সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খোলা মন নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কিত মুজিবুর রহমানের দাবির প্রশ্নে আমি তাঁর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।’
সামরিক আদেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিবৃতি
পূর্ব পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৫ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করে ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশে হুমকি দিয়ে বলা হয়, যারা কাজে যোগ দেবে না, তাদের চাকরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে।
সামরিক নির্দেশ জারির পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের দাবির কথা ঘোষণা করার পর নতুন করে এ ধরনের সামরিক নির্দেশ জারি করা, পক্ষান্তরে জনসাধারণকে উসকানি দেওয়ার শামিল। সামরিক কর্তৃপক্ষের এই সত্যটি উপলব্ধি করা উচিত, জনগণ সংকল্পে ঐক্যবদ্ধ। সামরিক সরকারের ভীতি প্রদর্শনের মুখে তারা কিছুতেই নতি স্বীকার করবে না। সামরিক কর্তৃপক্ষকে বঙ্গবন্ধু উসকানিমূলক তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
আরও দেখুন…