১৩ এপ্রিল ১৯৭১ | বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা জনগণকে | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

১৩ এপ্রিল ১৯৭১ | বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা জনগণকে | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত চেষ্টা এবং অজস্র ঘটনা। এখানে রইল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্তেকটি দিনের বিবরণ।

 

১৩ এপ্রিল ১৯৭১

বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা জনগণকে

 

নবগঠিত বাংলাদেশ সরকার ১৩ এপ্রিল জনগণের প্রতি নয়টি নির্দেশনা জারি করে। এর প্রথমটিতেই চিকিৎসা ও সেবাশুশ্রূষার জন্য আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসক বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে বলা হয়। বাকিগুলো ছিল সরাসরি মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে। সেসব নির্দেশনায় ঘরের শত্রুদের রুখে দাঁড়ানো, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে কর্তব্য জেনে নিতে এবং প্রশিক্ষণের জন্য তরুণদের নিকটবর্তী মুক্তিফৌজ দপ্তরে চলে আসতে বলা হয়।

সরকারের নির্দেশনায় আরও ছিল, প্রত্যেক গ্রামপ্রধান আশপাশের গ্রামপ্রধানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে খবর বিনিময় করবেন, মুক্ত অঞ্চলগুলোর সরকারি কর্মচারীরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা নেবেন।

নিজ এলাকায় মুক্তিফৌজ কমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী অসামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নিয়ম মেনে চলবে এবং সন্দেহভাজন লোকের খোঁজ পেলে কাছের মুক্তিফৌজ কেন্দ্রে জানাবে। ঢাকায় নদী পরিবহনকর্মীরা পাকিস্তানি বাহিনীর নির্দেশ অমান্য করায় বাংলাদেশ সরকার তাঁদের ধন্যবাদ জানায়।

 

History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo
History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo

 

বাঙালির পক্ষে জনমত

লক্ষ্ণৌ সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার প্রতি চীনের প্রকাশ্য সমর্থন ভারতকে নিবৃত্ত করবে না। বাংলাদেশের ঘটনায় ভারত নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না।

ভারতের রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিলে ১০ লাখ রুপি অনুদানের ঘোষণা দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ফ্রেড হ্যারিস সিনেটে এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে অসামরিক মানুষের যথেচ্ছ হত্যার খবরে তিনি শঙ্কিত। কংগ্রেস ও বহির্বিশ্বের পক্ষে সেখানকার পরিস্থিতি জানা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেসামরিক লোকদের যথেচ্ছ হত্যাকাণ্ডের খবর অসত্য প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

সাবেক যুগোস্লাভিয়া রাষ্ট্রের যুগোস্লাভ লিগ ফর পিস, ইনডিপেনডেন্স অ্যান্ড ইকুয়ালিটি অব পিপলস বিবৃতিতে বলে, বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাকিস্তান সরকারের মেনে নেওয়া উচিত।

 

১৩ এপ্রিল ১৯৭১ | বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা জনগণকে | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

 

পাকিস্তানের সঙ্গে একাত্মতা

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতীয় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে শান্তি কমিটি ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলে খান এ সবুর, খাজা খয়েরউদ্দিন, কবি বেনজীর আহমদসহ অনেকে ছিলেন।

প্রাদেশিক মুসলিম লীগ, নগর মুসলিম লীগ, নগর কনভেনশন মুসলিম লীগ, জাতীয় যুব পরিষদ, জমিয়াতুল ইত্তেহাদ এবং ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ পাকিস্তানের পক্ষে আলাদা আলাদা বিবৃতি দেন।

 

History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo
History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo

 

নানা স্থানে যুদ্ধ

বৃহত্তর রংপুরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি স্থানে যুদ্ধ হয়। সকালে তিস্তা রেলসেতুতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে পাকিস্তানি সেনারা তীব্র সশস্ত্র হামলা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তিস্তা সেতু ছেড়ে শিঙের ডাবরি, রাজার হাট ও টগরাইহাটে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বদরগঞ্জে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে ট্যাংক দিয়ে হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে যান।

তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কিছু সেনা, ইপিআর সেনা ও ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁও সীমান্তে অবস্থান নেন। সংগ্রাম কমিটির নেতারাও শহর ছেড়ে যান। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঠাকুরগাঁওয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখসমরে লিপ্ত না হয়ে খানসামার পথ ধরে পেছন দিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনা করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানি খানসামার কাছে নদী পার হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাজশাহী সেনানিবাস এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী আর্টিলারি, পদাতিক ও বিমান হামলা চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা সরে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় সমবেত হয়ে প্রতিরক্ষাব্যূহ রচনা করেন।

পুঠিয়ার বানেশ্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বানেশ্বরের যুদ্ধের পর বানেশ্বর ও সারদার পতন হয়।

পাকিস্তানি সেনারা সারদা দখল করার পর কয়েক শ সাধারণ মানুষ নদীতীরে আশ্রয় নেয়। সেনারা তাদের ঘেরাও করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের লাশ পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ‘সারদা গণহত্যা’ নামে পরিচিত হয়।

 

download ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ | বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা জনগণকে | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

 

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাটে সুবেদার শামসুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর একটি জলযান ডুবিয়ে দেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়।

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর দুজন নিহত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার গঙ্গাসাগর সেতুতে প্রতিরক্ষা অবস্থানে থাকা চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনা সমন্বয়ে গড়া একদল মুক্তিযোদ্ধার ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ দল গোলাবর্ষণ করে। তীব্র গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখেন।

যশোর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনারা নড়াইল শহরে পৌঁছায়। মুক্তিযোদ্ধারা তার আগেই শহর ছেড়ে যান।

চট্টগ্রামে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের নূতন চন্দ্র সিংহকে মন্দিরে প্রার্থনারত অবস্থায় পাকিস্তানিরা হত্যা করে।

বৃহত্তর সিলেটের লাক্কাতুরায় অসংখ্য চা-শ্রমিককে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করে।

 

আরও দেখুন…

Leave a Comment