৭ এপ্রিল ১৯৭১ – বাঙালি কূটনীতিকের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

৭ এপ্রিল ১৯৭১ | বাঙালি কূটনীতিকের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে ছিল দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত চেষ্টা এবং অজস্র ঘটনা। এখানে রইল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্তেকটি দিনের বিবরণ।

 

৭ এপ্রিল ১৯৭১ - বাঙালি কূটনীতিকের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

 

৭ এপ্রিল ১৯৭১ : বাঙালি কূটনীতিকের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন

 

ভারতের রাজধানী দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের দুজন বাঙালি কূটনীতিক শেহাবউদ্দিন আহমদ ও আমজাদুল হক ৭ এপ্রিল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। তাঁরাই প্রথম কোনো বাঙালি কূটনীতিক, যাঁরা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলেন।

দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনে শেহাবউদ্দিন আহমদ দ্বিতীয় সচিব হিসেবে এবং আমজাদুল হক সহকারী প্রেস অ্যাটাশে হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

 

History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo
History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo

মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই অব্যাহতবিমান, জাহাজ ও পদাতিক বাহিনীর সমন্বয়ে পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামে বিপ্লবী বেতার ভবনে তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। সে আক্রমণ পাল্টা প্রতিরোধ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। একপর্যায়ে তাঁরা পিছু হটে কালুরঘাটের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থানে এসে জড়ো হন। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়।চট্টগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন স্থানে এই দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট-বড় যুদ্ধ চলে। ইপিআরের অবাঙালি ১৮ জনের একটি সশস্ত্র দলের সঙ্গে নায়েক সুবেদার আবদুল লতিফের নেতৃত্বে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা যুদ্ধ করেন। যুদ্ধ চলাকালে বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি দল বাঙালি ইপিআরের সঙ্গে এসে যুক্ত হয়। অবশেষে ১৮ জন পাকিস্তানি আত্মসমর্পণ করে। তাদের রামগড়ে নিয়ে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাটের শিয়ালবুককাতেও পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি যুদ্ধ হয় যশোরের লেবুতলায়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামান্য ক্ষতিসাধন করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন।

 

৭ এপ্রিল ১৯৭১ | বাঙালি কূটনীতিকের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

 

পাকিস্তানপন্থী বাঙালি নেতাদের তৎপরতা

মুসলিম লীগের সাবেক নেতা খান এ সবুর ঢাকায়
পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জামায়াতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমির গোলাম আযম, গোলাম সারওয়ার ও মাওলানা নুরুজ্জামান ঢাকায় এক যুক্ত বিবৃতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করতে সশস্ত্র বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।

আরও যেসব রাজনৈতিক দল এই দিন বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাত্মতা জানায়, তাদের মধ্যে ছিল মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং ইসলামিক রিপাবলিক পার্টি।

 

History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo
History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo

 

বিশ্ব গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক অঙ্গন

বিবিসির খবরে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েকটি দেশের নাগরিক কলকাতায় পৌঁছে জানিয়েছেন, সেখানে তাঁরা রাস্তায় মৃতদেহ স্তূপীকৃত হয়ে থাকতে দেখেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, দুই সপ্তাহের লড়াইয়ে বিপুল ধ্বংস সাধিত হয়েছে।

এক মার্কিন নাগরিক জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য সেনাবাহিনী তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি রাস্তায় বহু মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি বলেন, শহরজুড়ে এখন শুধু মৃতদেহের গন্ধ। চট্টগ্রাম এখন একটি ভৌতিক নগরী। সেনাবাহিনী, মৃতদেহ আর কুকুর ছাড়া সেখানে আর কিছু নেই। একজন শরণার্থী বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা দেখামাত্রই পূর্ব পাকিস্তানিদের গুলি করছে। স্থানীয়রাও চট্টগ্রাম বন্দরে অবাঙালিদের হত্যা করছে।

‘বাংলায় রক্তবন্যা’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমস এই দিন একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলে, সংকট শুরু হওয়ার পরপরই পূর্ব পাকিস্তানে অব্যাহত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তারা কয়েকবার উদ্বেগ এবং শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে আমেরিকার করণীয় সম্পর্কে এই দিন কংগ্রেস সদস্য শিমুর হলপার্ন বক্তব্য দেন।

 

History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo
History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ] GOLN logo

আরও দেখুন…

Leave a Comment