আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ হামুদুর রহমান কমিশন প্রসঙ্গ। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
হামুদুর রহমান কমিশন প্রসঙ্গ
হামুদুর রহমান কমিশন প্রসঙ্গ
পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা কখনো বাঙালিদের ভালোবাসে নি। তারা কখনোই পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলি জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয় নি। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ও সরকার ব্যর্থ হয়েছে প্রদেশের বাস্তবতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে।
তাই তারা পারে নি পরিস্থিতিকে এর যথাযথ প্রেক্ষিতে বিচার করতে। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ও সরকার ছিল ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে । সৈন্যরা সেখানে কী পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তা তাদের বোঝার কথা নয়। জনগণকে মিথ্যা সংবাদ ও মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এতে ফুলে ফেঁপে ওঠে তাদের প্রত্যাশা। বেড়ে যায় তাদের মনের আশা। বিপর্যয়ের সংবাদ প্রচণ্ডভাবে ঝাকুনি দেয় জনগণের বিবেককে। এ দুঃসংবাদ শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না তারা। এতে তাদের আশা ভেঙে যায় এবং ধূলিসাৎ হয়ে যায় অহংকার। ক্ষোভ ওঠে চরমে তাদের। জাতিকে গ্রাস করে গভীর হতাশা। তাদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে হবে এবং এটা অপরিহার্যও ছিল। এ পটভূমিতে গঠন করা হয় ‘হামুদুর রহমান কমিশন’।
জনগণের দাবি ছিল বিশ্বাসঘাতকদের ফাঁসিতে ঝুলানো। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারা নেমে আসে রাস্তায়। এক সাংবাদিক সম্মেলনে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে জিজ্ঞেস করা হয়, ইয়াহিয়া খানের কি বিচার করা হবে?’
জবাবে তিনি বলেন যে, বিশ্বাসঘাতকদের বিচার করার জন্য যারা আওয়াজ তুলেছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ইতোমধ্যেই তারা পরাজিত হয়েছে। যখন বলা হলো যে, জাতি তাদের ফাঁসি চায়। তিনি বললেন, ‘আমি এর অংশ হতে চাই না।’
জনগণের দাবি এতো প্রবল ছিল যে, তা উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। সময় ক্ষেপণে জুলফিকার আলী ভুট্টোর অবস্থান নাজুক হয়ে উঠবে। তাকে তার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণে এ উভয় সংকট থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
১৯৭১ সালের ২৪শে ডিসেম্বর পাকিস্তান ভেঙে যাবার বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো তদন্তে ভুট্টো নতুন প্রেসিডেন্ট ও বেসামরিক সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে প্ৰধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেন।
সর্বস্তরের মানুষ এ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। জনগণের দাবি পূরণ করা হয়েছে। এটা ছিল একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন। আশা করা হয়েছিল যে, এ কমিশন ভয়-ভীতি ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কাজ করবে।
জাতি কমিশনের ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা স্থাপন করে। যুদ্ধবন্দি শিবিরে থেকেও আমরা খুশি হয়েছিলাম। একজন প্রধান বিচারপতি এ ঘটনার নিষ্পত্তি করবেন। সত্যের জয় হবে, সত্য প্রকাশিত হবে এবং প্রকৃত দোষীদের মুখোশ উন্মোচিত হবে এবং অশুভ মেঘ কেটে যাবে।
কিন্তু ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ একটি প্রহসনে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপ্রধান কমিশনের শর্তাবলি নির্ধারণ করেন। এসব শর্তের আওতায় কমিশনকে শুধু ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার ও তার কমান্ডের আওতায় সশস্ত্র বাহিনী কোন পরিস্থিতিতে আত্মসমর্পণ এবং পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্ত এবং জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ততোটুকু তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
তদানীন্তন সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান শর্ত আরোপ করে তদন্ত কমিশনের হাত-পা বেঁধে দেওয়ার বিরুদ্ধে কোনো শব্দটি করেন নি। গুল হাসান ও টিক্কা দুজনেই পূর্ব পাকিস্তানে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ছিলেন । তাই তদন্ত কমিশনের সীমানা সংকুচিত হওয়ার তারা সন্তুষ্ট হন।
বস্তুতপক্ষে, তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্যই কমিশনের তদন্ত কাজে শর্তারোপ করা হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর ওপর চাপ দেওয়া ছিল গুল হাসান এবং টিকার নৈতিক দায়িত্ব। এ চাপ দিয়ে তারা পাকিস্তান ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরাট উপকার করতে পারতেন।
কিন্তু তারা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য জাতি ও সেনাবাহিনীর সাথে প্রতারণা করেন। পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা কমিশনের কখনো লক্ষ্য ছিল না। জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে ধামাচাপা দেওয়াই ছিল কমিশনের কাজ। কমিশন সুচিন্তিতভাবে গোপন করেছে বেশি এবং প্রকাশ করেছে কম।
একজন ক্ষমতালিদু লোকের ঘৃণ্য তৎপরতা থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এটাকে একটি বলির পাঁঠা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ক্ষমতালিন্দু লোকটি একটি জাতির এমন ক্ষতি করেছে যা কখনো পূরণ হবার নয়।
খুব সাদামাটা দৃষ্টিতেও শর্ত আরোপের অসৎ উদ্দেশ্য ধরা পড়ে। কমিশনের এখতিয়ার সামরিক তৎপরতা বিশেষ করে পূর্ব রণাঙ্গনে সামরিক তৎপরতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এ সামরিক তৎপরতাকে মূল জাতীয় যুদ্ধ পরিকল্পনা থেকে আলাদা করে বিচার করা হয়।
যেসব ঘটনা পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য দায়ী সেসব ঘটনাকে কমিশনের দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়। রাজনৈতিক সংকটেই এ বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু কমিশনকে রাজনৈতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ ও রাজনেতিক দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় নি।
ক্ষমতালিদুদের প্রকাশ্য ও গোপন তৎপরতায় জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয়। কিন্তু এসব তৎপরতা ছিল কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। ক্ষমতা লিপ্সার জন্যই ঘটেছে সর্বনাশ। রাজদণ্ড ও রাজসিংহাসন দখলে দেশের অর্ধেক খোয়ানো হয়েছে। ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা থেকে সবে খাওয়া জুলফিকার আলী ভুট্টোর পক্ষে সম্ভব ছিল না। সত্যকে মিথ্যা বানানো ক্ষমতার রাজনৈতিক খেলায় খুবই সামান্য পাপ ।
“এ ভয়াবহ নাটকের প্রধান চরিত্রগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর একজন জীবনী লেখক চমৎকারভাবে বলেছেন যে, ১৯৭১ এর বিপর্যয়ের জন্য ইয়াহিয়া খান, মুজিব ও জুলফিকার আলী ভুট্টোই দায়ী।
তবে অনেকেরই অভিমত এই যে, এ তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে জুলফিকার আলী ভুট্টোকেই এ ঘটনার সিংহভাগ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। কেননা, তার কর্মকারে পরিণাম সম্পর্কে ধারণা করার মতো তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছিলেন।(সালমান তাসির, এ পলিটিক্যাল বায়োগ্রাফি, ২৩ ও ২৬ জুলাই, ১৯৮৬, দৈনিক ডন-এ.এ. টি. চৌধুরী এ উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন)
যদি ভবিষ্যতে প্রয়োগের জন্য সামরিক শিক্ষা আহরণ অথবা সামরিক কর্মকর্তাদের তৎপরতা মূল্যায়ন করা কমিশনের লক্ষ্য হতো তাহলে বিষয়টি ছিল। ভিন্ন। পেশাগত যোগ্যতা ও প্রশ্নাতীত সততার অধিকারী সামরিক বিশেষজ্ঞদের ওপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা অপরিহার্য ছিল। তদন্তের সীমারেখা বেঁধে দেওয়ায় তাদের অভিপ্রায় সম্পর্কে আমাদের মনে সন্দেহ উঁকি দেয়। তারা সুস্পষ্টরূপে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, কয়েকজন অফিসারকে বলির পাঁঠা বানানো। হবে।
এসব ঘটনায় যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তারাই তদন্তের শর্তাবলি ঠিক করায় এতে দুটি বড়ো রকমের রুটি লক্ষ্যণীয়। প্রথমত, তারা পেশাগত সামরিক বিষয়াদিতে তদন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছেন এবং শুধু পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলিকে তদন্তের আওতায় রেখেছেন।
প্রথম ছাড় দেওয়ার লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে রক্ষা করা এবং দ্বিতীয় ছাড় দেওয়ার লক্ষ্য হচ্ছে মিলিটারি হাই কমান্ডের কার্যকলাপ গোপন রাখা। এসব ছাড় দেওয়ার কারণ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। কারণ, যে রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব তদন্তের এসব শর্ত নির্ধারণ করেছেন তারাই পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন।
এ ধরনের ছাড় দেওয়ার বিপর্যয়ের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করা আদৌ সম্ভব হবে না। পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার ও তার সৈন্যদের অভিযুক্ত করাই মূল নায়কদের জন্য সুবিধাজনক। এ জন্য তদন্তের সীমারেখা বৃদ্ধি করা হয় নি।”
(দ্য মুসলিম, ইসলামাবাদ, জানুয়ারি ১৯৯১) আশংকা অনুযায়ী ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ একটি প্রহসনে পরিণত হয়। জাতীয় পর্যায়ে এটা ছিল একটি হাস্যকর তদন্ত। বিপর্যয়ের দুই মূল নায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টো ও টিক্কা দৃঢ়ভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হন।
নিজেদের মধ্যে তারা রাষ্ট্রের দুটি শীর্ষ পদ ভাগাভাগি করে নেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শীর্ষ রাজনৈতিক পদ এবং আরেকজন সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদ দখল করেন। ক্ষমতার অলিন্দ থেকে তারা ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেন।
লোকজন স্বার্থের মোহে নয়তো চাপের মুখে কমিশনের কাছে জবানবন্দি দেন। পুরোপুরি দায়মুক্ত করা হয় টিক্কাকে। রিপোর্টে তার নাম উল্লেখ করা হয় নি। জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজের নির্দোষিতা নিশ্চিত করেন। ব্যর্থতা ক্ষমা করা যায়।
কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা ক্ষমা করা যায় না। মরহুম খ্যাতিমান সাংবাদিক জনাব এ টি চৌধুরী তার অনুসন্ধানী রিপোর্টে লিখেছেন :
“পিপিপি’র হোমরা-চোমরারা হামুদুর রিপোর্টেকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিতেই পরিণত করে নি, তারা একপেশে, সংক্ষিপ্ত ও পক্ষপাতদুষ্ট’ প্রভৃতি বিশেষণ প্রয়োগ করে এ রিপোর্টের নিন্দাও করেছে। রিপোর্টকে অপর্যাপ্ত দেখে জুলফিকার আলী ভুট্টোর লোকজন তাদের নেতাকে দোষারোপ না করে পারেন নি। বস্তুত, তদন্ত কমিশন গঠন করার সময় জুলফিকার আলী ভুট্টো সতর্ক ছিলেন যাতে এ কমিশনের পরিধি সীমিত থাকে এবং এ জন্য তিনি শর্ত বেঁধে দিয়েছিলেন।
সন্দেহাতীত সূত্রের ভিত্তিতে যে কেউ একথা বলতে পারে যে, এ তদন্ত কমিশনকে তাদের তদন্ত সামরিক বিপর্যয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার এবং আত্মসমর্পণের কারণ বিশেষভাবে সামরিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী রাজনৈতিক পটভূমি উদ্ঘাটন না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বিচারপতি হামুদুর রহমান ঢাকার পতন ঘটার আগে পরিস্থিতির সামগ্রিকতাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তলিয়ে দেখার জন্য তদন্তের সীমানা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু তাকে রাজনৈতিক বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
ডেন, করাচি, ২৩ ও ২৬ জুলাই, ১৯৮৬)। যেহেতু যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির একটি সম্প্রসারিত অংশ, তাই পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকটের ফলে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং সামরিক অভিযান একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ ও পাকিস্তানের ব্যবচ্ছেদের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি লাভ করে। কিন্তু ‘হামুদুর রহমান কমিশন’কে রাজনৈতিক বিষয়ে তদন্ত করতে দেওয়া হয় নি।
আমি যতোবার কমিশনের মুখোমুখি হয়েছি ততোবারই রাজনৈতিক ব্যর্থতার উদাহরণ দিয়ে কমিশনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, এটা সামরিক নয়, একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় ও সংকট। কিন্তু প্রতিবারই কমিশন বলতো যে, রাজনৈতিক বিষয় তদন্তযোগ্য নয়।
রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে সামরিক তৎপরতাকে আলাদা করা সম্ভব নয়। রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে দেন-দরবার করেন। তারা ব্যর্থ হলে সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং রাজনৈতিক নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে। সামরিক তৎপরতার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। জনাব এটি চৌধুরী আরো লিখেছেন :
‘হামুদুর রহমান কমিশনের স্পন্সর সুপার পলিটিশিয়ান যদি এ কমিশনের পরিধি নির্ধারণ করে থাকেন এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলি এড়িয়ে যাবার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাহলে এ কথাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, যারা ক্ষমতার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন তাদের অপকর্ম আড়াল করা জন্যই এ রিপোর্টকে অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে।
এ কমিশনের পরিধি সামরিক তৎপরতা বিশেষ করে পূর্ব রণাঙ্গনের সামরিক তৎপরতা পর্যন্ত সীমিত রাখা হয়। কিন্তু পশ্চিম রণাঙ্গনের সামরিক তৎপরতাকে এর আওতায় আনা হয় নি। এটা অন্যায় এবং এর উদ্দেশ্য উচ্ছে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার ও তার সৈন্যদের ক্রুশবিদ্ধ করা।
ভৌগোলিক বাস্তবতাকে বিচেনায় রেখে উভয় রণাঙ্গনের জন্য অভিন্ন জাতীয় যুদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। পারস্পরিক সম্পর্কে বজায় রেখে যুদ্ধ করার কথা ছিল। এ কথা সত্য না হলে বলা হতো না যে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানে করা হবে’ এবং হাই কমান্ডও পূর্ব রণাঙ্গন থেকে পশ্চিমে ভারতীয় সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ না দিতে আমাকে নির্দেশ দিতো না।
হাই কমান্ডের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আমাকে ভারতের ২০তম ডিভিশনের বিরুদ্ধে আমার পরিকল্পিত অভিযান বন্ধ রাখতে হয় এবং ভারতের ৬ষ্ঠ ডিভিশনকে ব্যস্ত রাখার জন্য দিনাজপুর-সৈয়দপুর এলাকায় আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করতে হয়।
ভারতের ৬ষ্ঠ ডিভিশনকে পশ্চিম রণাঙ্গনে স্থানান্তর করার কথা ছিল। অভিন্ন পরিকল্পনার আওতায় যুদ্ধ না হলে লড়াই চালিয়ে যাবার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমাকে অস্ত্র সংরবরণ করতে হতো না। প্রথমে আঘাত হেনেও ভারতীয় সৈন্যদের অগ্রযাত্রা রোধে আমাদের অক্ষমতার জন্য পশ্চিম রণাঙ্গনে আমরা পরাজিত হই।
জাতীয় ও সামরিক কৌশলের সাথে গভীরভাবে পরিচিত না হওয়ায় আমরা কথা আশা করতে পারি না যে, এ কমিশন একটি নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আফতাব একটি তদন্ত চালাচ্ছিলেন। তার সাথে আমার বাদানুবাদ হয়।
আমি পশ্চিম রণাঙ্গনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং পূর্ব পাকিস্তানের ওপর চাপ কমাতে পশ্চিম রণাঙ্গনে পরিকল্পিত হামলা চালাতে টিক্কার ব্যর্থতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা মাত্র তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে চিন্তা করবেন না। চলুন আমরা পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে মনোযোগ দিই।’
আমি কোনো নিম্নপদস্থ কর্মকর্তা ছিলাম না। একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ও একটি রণাঙ্গনের কমান্ডার হিসেবে আমাকে কৌশলগত পর্যায়ে ভাবতে হয়েছে। তাই পশ্চিম রণাঙ্গনের তৎপরতা এড়িয়ে যেতে পারি নি।
আমি আমার স্টাফকে একটি মানচিত্রে পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধের ছক আঁকতে নির্দেশ দিই. জেনারেল আফতাব ছিলেন একজন সরল ধরনের মানুষ। তিনি রাষ্ট্রদূত: হিসেবে লিবিয়ার যাবার টোপ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন নি। কর্নেল সাবির কোরেশী হামুদুর রহমান কমিশন ও আফতাব কমিটির মধ্যে একজন লিয়াজো অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন। তাকেও সৌদি আরবে সামরিক অ্যাটাশে করে পাঠানো হয়।
হামুদুর রহমান কমিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমান। এ কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক এবং বিচারপতি তোফায়েল আলী আবদুল রেহমান। কর্নেল হাসান ছিলেন আইন উপদেষ্টা।
যুদ্ধের পরিকল্পনা ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতকে সহায়তা করার জন্য সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আলতাফ কাদিরকে নিযুক্ত করা হয়। এ ধরনের কমিশন গঠনে অনেকেই ভ্রূ কুঞ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে এটি চৌধুরী লিখেছেন, ‘কমিশন গঠনেও অভিপ্রায় ধরা পড়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কমিশন গঠন করা হয়েছে এমন একজন বিচারপতির নেতৃত্বে যার সততা সন্দেহের ঊর্ধ্বে। তবে তিনি ছিলেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের লোক।
পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তিনি অবশ্যই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। এ ছাড়া কমিশনে কোনো নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা উঁচুমানের একজন সামরিক বিশেষজ্ঞকেও রাখা হয় নি। সব বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকেও ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু যেতে চান নি তিনি।
এ দুর্বলতাকে একটি অনুকূল রিপোর্ট প্রণয়নে কাজে লাগানো হয়। সাধারণত বিচারপতিগণ রাজনৈতিক দলের সংশ্রব থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্টো হামুদুর রহমান কমিশনের সদস্যদের পিপিপি’তে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। এতে তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ে।
বিচারপতি হামুদুর রহমান একবার আমাকে জানিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে বলেছেন যে, জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কয়েক টন প্রমাণসহ শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছেন।
বিচারপতি হামুদুর রহমান আমাকে আরো জানিয়েছিলেন যে, তার এক ছেলে মেজর। কিন্তু তাকে বাংলাদেশে যাবার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। হামুদুর রহমানের ছেলেই একমাত্র বাঙালি যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে যায়।
কমিশনের দ্বিতীয় ব্যক্তি বিচারপতি আনোয়ার-উল-হক ছিলেন রাজনীতিতে নিরাসক্ত। তৃতীয় ব্যক্তি বিচারপতি তোফায়েল আলী আবদুল রহমান ছিলেন একজন খাঁটি বিচারক। তার আচরণ ছিল পক্ষপাতহীন এবং মর্যাদাপূর্ণ।
চতুর্থ ব্যক্তি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) আলতাফ কাদির এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্ব পালনে মোটেও যোগ্য ছিলেন না। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে কখনো কোনো ফরমেশনের নেতৃত্ব দেন নি। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ভূমি এবং সৈনা চলাচল ও সামরিক অভিযানে ভূমির প্রভাব সম্পর্কেও জানতেন না ।
তিনি যুদ্ধে কখনো সৈন্য পরিচালনা করেন নি। ১৯৬৫ সালে ডিভিশনের কমান্ডার ছিলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধ আসন্ন হয়ে ওঠার সাথে সাথে তাকে কমান্ড থেকে অপসারণ করা হয়। তিনি এক অস্পষ্ট ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন এবং তার সামরিক জ্ঞান ও পূর্ব পাকিস্তানে লড়াইয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব ছিল। জেনারেল কাদির অহেতুক প্রশ্ন করতেন এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন। এতে কমিশন মাঝে মাঝে তার প্রতি বিরক্ত হতো এবং বিচারপতি হামুদুর রহমানকে তার ভুল সংশোধনে এগিয়ে আসতে হতো।
বেসামরিক বিচারকদের সামরিক বিষয়াদিতে অভিজ্ঞতা বিশেষ করে অসামরিক জ্ঞান ও স্টাফ সিস্টেম, যুদ্ধের কৌশল ও পরিকল্পনা, স্থায়ী নির্দেশ, ড্রিল ও পদ্ধতি এবং নিয়ম-কানুন ইত্যাদি বিষয়ে কোনো জ্ঞান ছিল না। ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ বার বার আমাকে প্রশ্ন করছিল যে, আমি কেন সৈন্যদের বার্মার (মায়ানমার) দিকে নিয়ে যাই নি।
এ প্রশ্নে প্রকাশ পেয়েছে তাদের সরলতা লড়াই থেকে পিছু হটে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হাজার হাজার সৈন্যের শত শত মাইল পাড়ি দেওয়া সম্পর্কে তাদের ন্যূনতম ধারণা ছিল না। অনুগত লোকজনের পরিণতির কথাও মাথায় আসে নি তাদের।

-আমার মনে হয় তারা রিপোর্টে লিখেছেন যে, আমি সকল সৈন্য নিয়ে বার্মায় (মায়ানমার) চলে যেতে পারতাম। বার্মার পালিয়ে যাওয়া যদি যুক্তিযুক্ত হয় তাহলে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব মেনে নেওয়া ছিল তার চেয়েও যুক্তিযুক্ত।
সম্ভবত কমিশন মেজর জেনারেল ফজল মুকিমের ‘অন প্রিসারভেশন অব কমান্ড’-এর ধারণায় প্রভাবিত হয়েছেন। এ ধারণা বলতে কী বোঝায় তা মুকিম নিজে এবং কমিশন উভয়েই কিছু বুঝতেন না। ভূ-রাজনীতি, সামরিক কৌশল এবং জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কমিশনের বিবেচ্য বিষয় ছিল না।
একটি বিদেশি রাষ্ট্রে সৈন্য নিয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও ঝুঁকি তারা বুঝতে চেষ্টা করতেন না। বার্মার দিকে সৈন্য পরিচালনার কোনো কারণ তারা উল্লেখ করেন নি। আমি চমৎকারভাবে লড়াই করছিলাম এবং সংখ্যায় বিশাল একটি শত্রুকে তাদের লক্ষ্য অর্জনের সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিচ্ছিলাম। আমি কৌশলগত দিক থেকে ভারতীয়দের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলাম ।
সামরিক উপদেষ্টার প্রশ্নগুলো ছিল কেতাবী, শিশুসুলভ ও বাস্তবতাবিবর্জিত। ঘটনার বাস্তবতার সাথে তার প্রশ্নের মিল ছিল না। এ পরিস্থিতিতে কমিশন চক্রান্ত ও পরিকল্পিত মিথ্যাচারের অতলে হারিয়ে যাওয়া সত্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়।
তিনজন বিচারপতি, একজন আইন ও আরেকজন সামরিক উপদেষ্টা নিয়ে এ কমিশন গঠিত হওয়া সত্ত্বেও মেজর জেনারেল কোরেশী, কর্নেল সাবির কোরেশী ও আরো কয়েকজনের সমন্বয়ে গঠিত জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের একটি টিমও তদন্তে অংশগ্রহণ করতো
জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের এ টিমের বাগাড়ম্বরপূর্ণ আচরণ ও উপর্যুপরি হস্তক্ষেপ শুধু উষ্কানিমূলকই ছিল না, তারা এ কমিশনকে একটি বেআইনি তদন্ত আদালতেও পরিণত করেন। তারা ইচ্ছেমতো সাক্ষীদের জেরা করতেন।
আমাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার মৌলিক অধিকারও দেওয়া হয় নি। তাদের সার্বক্ষণিক বিঘ্ন সৃষ্টি ছিল কমিশনের প্রতি একটি অমার্যাদা ও অসম্মান। তবু কমিশন বিনা আপত্তিতে তাদের বাড়াবাড়ি মেনে নিতেন। তারা আইন কর্মকর্তা অথবা কমিশনের সদস্য কোনোটাই ছিলেন না। তারা কোন ক্ষমতা বলে আমাদের জেরা করেছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
কমিশনের কাজে বাধা দানই জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের একমাত্র অনিয়ম নেয়। তারা সামরিক তৎপরতা তদন্তে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আফতাব কাদিরের নেতৃত্বে আরেকটি সমান্তরাল কমিটিও গঠন করেছিল। এ কমিটি গঠন করা ছিল আদালত অবমাননার শামিল।
কারণ, হামুদুর রহমান কমিশন তখন তদন্ত চালাচ্ছিল। এ কমিটির মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্বাহ্নে অফিসারদের বিবৃতি তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করা, তাদের মনের ভাব ও গতি ঠিক করে দেওয়া এবং তাদেরকে গ্রুপে বাছাই করা।
সাধারণত জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের নীতির সাথে যাদের মতের মিল হতো কেবল তাদেরকে হামুদুর রহমান কমিশনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। আর যারা দ্বিমত পোষণ করতো তাদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং বক্তব্য পাল্টানোর জন্য প্রলোভন দেখানো হতো। এরপরও যারা নতিস্বীকার করে নি তাদেরকে যথাক্রমে সেনাবাহিনী থেকে বিদায় করা হয়।
অফিসারদের মতামত পরিবর্তনে জেনারেল টিক্কা জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে যা করছিলেন লাহোরে চতুর্থ কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ কাজী ও তাই করছিলেন। জেনারেল হামিদ লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বলেন। ব্রিগেডিয়ার আসগর হাসান ও ব্রিগেডিয়ার কাদির আমাকে এ কথা জানিয়েছেন ।
জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ও লাহোরের ঘটনাবলির বিরুদ্ধে আমি টিক্কার কাছে প্রতিবাদ করি। কিন্তু কোনো ফল হয় নি। টিক্কার নির্দেশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় এসব অশুভ তৎপরতা চালানো হচ্ছিল। তাই তার পক্ষে কাউকে শাস্তি দেওয়া অথবা কাউকে ভর্ৎসনা করা সম্ভব ছিল না। আমি আফতাব কমিটিতে হাজির হতে অস্বীকৃতি জানাই।
তখন আমাকে কোর্ট মার্শালের ভয় দেখানো হয়। তাই প্রতিবাদ সত্ত্বেও আমি এ কমিটিতে হাজির হই। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আফতাবের কাছে লেখা চিঠিতে আমি পরিষ্কার ভাষায় জানাই যে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় আইন ভঙ্গের দায়-দায়িত্ব জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের।
আমি একটি আইনগত রুলিং চাই। কিন্তু আমাকে এ রুলিং দেওয়া হয় আমি বুঝতে পারি যে, জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে জেনারেল টিক্কা খানের অধীনের একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। এ সেলের দায়িত্ব ছিল সাক্ষ্য মূল্যায়ন করা এবং কমিশনের জন্য কৌশল নির্ধারণ করা। সাক্ষীদের যেসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস হবে যেসব প্রশ্নের একটি তালিকা দেওয়া হয় কর্নেল সাবির কোরেশীকে। টিক্কা কর্নেল সাবিরকে ব্যক্তিগতভাবে ব্রিফ করতেন।
ফজল মুকিমের বই ছিল আদালত অবমাননার শামিল। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা হলে প্রধান বিচারপতি হামুদুর নিরাসক্তভাবে বলেন, আমার সময় নষ্ট করবেন না। বিচারকরা যেখানে ছিলেন তৈরি সেখানে সঙ্গত কারণেই ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করা যায় না। ফজল মুকিমের বই পরোক্ষ এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে সাক্ষীদের প্রভাবিত করছিল এবং সরকারি লাইনে তাদেরকে চিন্তা করতে উৎসাহিত করছিল। এ জন্য আমার আপত্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়।
ইন্টার্ন গ্যারিসনের সৈন্যরা ভারতে যুদ্ধবন্দি শিবিরে আটক থাকাকালেই ‘হামুদুর রহমান কমিশন’ কাজ করতে শুরু করে। এ কমিশনের তদন্ত শুধু পূর্ব রণাঙ্গনে যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে দুর্নীতি, অযোগ্যতা, অসন্তোষজনক যুদ্ধ তৎপরতা, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে যেসব অফিসারকে বরখাস্ত করা হয় সেসব অফিসারের জাবানবন্দিই কমিশন রেকর্ড করতে থাকে।
তখনি এ কমিশনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। যেসব সৈন্য ও অফিসার বীরত্বের সাথে লড়াই করে যুদ্ধবন্দি হয় তাদেরকে ওসব অযোগ্য অফিসারদের সামনে খাটো করার ঘৃণ্য মানসিকতা থেকেই এরূপ করা হচ্ছিল। হামুদুর রহমান কমিশন এসব অযোগ্য অফিসারের বিবৃতির ভিত্তিতেই এর তদন্ত চালাচ্ছিল।
আমার আপত্তির পর কমিশন একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে মেজর জেনারেল কোরেশীকে এ কার্যক্রমে যোগানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। আমাদের চরিত্র ও সম্মানের প্রশ্ন জড়িত থাকা সত্ত্বেও সাক্ষীদের বক্তব্য শ্রবণ এবং তাদেরকে জেরা করার অনুমতি দেওয়া হয় নি।
কিন্তু দেশের কোন আইনের বলে কোরেশীকে কমিশনে বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? এ ছাড়া এডিসি ও স্টেনোগ্রাফারদেরকে তাদের জেনারেলের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট জেনারেলদের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।
এ থেকে আমি ও ধারণায় উপনীত হই যে, কমিশনের রিপোর্টে আমার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে না। ‘দৈনিক ডন’-এ ১৯৮৬ সালের ২৩শে ও ২৬শে জুলাই প্রকাশিত মরহুম এ টি চৌধুরীর অনুন্ধানী রিপোর্ট একটি চক্ষু উন্মোচনকারী ঘটনা।
সুতরাং এ ব্যাপারে আমি আমার নিজস্ব বক্তব্য পরিবেশন করার চেয়ে তার উক্তি উল্লেখ করাই শ্রেয় বলে মনে করি। দৈনিক ডন-এর সৌজন্যে পরিশিষ্ট ৫-এর তার এ অত্যন্ত মূল্যবান রিপোর্টগুলো দেওয়া হলো । এখানে কিঞ্চিৎ উল্লেখ করছি :
‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, কমিশন বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের ব্যবচ্ছেদ এবং সামরিক বিপর্যয়ের রাজনৈতিক পটভূমি সম্পর্কে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও ইচ্ছায় নীরব সম্মতি দিয়েছে। যেসব দেশপ্রেমিক পুরনো ছাইভস্মের ওপর ‘নতুন পাকিস্তান’ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন তারা ইয়াহিয়ার বিচার করে নি। প্রশ্ন হচ্ছে, মূল খলনায়ককে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো। এর কারণ হচ্ছে, তার বিচার করা হলে নির্লজ্জ নায়কদের চেহারা উন্মোচিত হতো এবং প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যেতো।
ভুট্টো হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার সাহস পান নি। কারণ, যেসব রাজনৈতিক কারণ ও ভুলের জন্য দেশ ভেঙে গেছে তিনি সেগুলোর সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। কমিশন ভুট্টোকে তুষ্ট করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করা সত্ত্বেও এ রিপোর্ট পিপিপি সরকারের মন্ত্রিসভাকেও দেখতে দেওয়া হয় নি।
মন্ত্রিসভার একটি সাব-কমিটিকে এক নজর এ রিপোর্ট দেখার অনুমতি দেওয়া হয়। এ কমিটিতে যারা ছিলেন তারা হলেন, জেএ রহিম, খান আবদুল কাইউম খান (জোটের শরীক), হাফিজ পীরজাদা, জেনারেল টিক্কা যান, আজিজ আহমেদ, রফি রাজা ও গিয়াসউদ্দিন ।
এরা এ রিপোর্ট প্রকাশ না করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন বলে জানা যায়। রিপোর্টের পক্ষপাতিত্ব খুবই স্পষ্ট। কমিশনে যেসব বিবৃতি রেকর্ড করা হয়। রিপোর্টে সেগুলো স্থান পায় নি। রিপোর্টের অর্ধেক হচ্ছে পুনরাবৃত্তি এবং বাকি অর্ধেক হচ্ছে ভাসা ভাসা। কমিশন চরিত্র হনন করেছে। এটা পুরো অথবা আংশিকভাবেও তদন্ত আদালতের রীতি-নীতি অনুসরণ করে নি।
সর্বাধুনিক সামরিক মতবাদ এবং যুদ্ধের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় এগুলোর প্রয়োগ সম্পর্কে কমিশনের ধারণা না থাকায় এ কমিশনের রিপোর্টের কতোটুকু মূল্য আছে? আমাদের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ আইনগত সিদ্ধান্তের জন্য সকলের কাছে সমাদৃত। কিন্তু যেখানেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত ছিল সেখানেই তারা ভুল করেছেন।
গোলাম মোহাম্মদ ও মৌলভী তমিজউদ্দিন খানের মামলায় প্রধান বিচারপতি মুনীরের সিন্ধান্ত অথবা জেনারেল জিয়াউল হকের ল’ অব নেসেসিটি অথবা ইয়াহিয়ার পদত্যাগের পর ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে তাকে ঘোষণা দানের ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্তে ভুল হয়। হামুদুর রহমান কমিশন প্রচলিত সন্ত কমিশনের কোনো রীতি-নীতি অনুসরণ করে নি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আইনের উল্লিখিত ধারার আওতায় যেখানে কারো চরিত্র হনন ও সুনামের প্রশ্ন জড়িত সেখানে বিবাদীকে সাক্ষীদের জেরা করার অনুমতি দান বাধ্যতামূলক। আমাদেরকে এ আইনগত অধিকার দেওয়া হয় নি। ফলে কোনো সাক্ষীকে জেরা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি।
শর্ত অনুযায়ী, কমিশনের আত্মসমর্পণ ও অস্ত্র সংবরণের ঘটনা তদন্ত করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কাগজপত্র পরীক্ষা করতেই দুই দিন কেটে যায়। কমিশন আদালতে ঘোষণা করে যে,
১. প্রেসিডেন্ট ১৪ই ডিসেম্বর অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ ইস্যু করেন।
২. ১৯৭১ এর ১৪ই ডিসেম্বর ০৯:১০ গ্রিনিচ সময়ে জেনারেল নিয়াজি একটি পল্টা বার্তা পাঠিয়ে বলেন যে, যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্তে আমি এখনো অটল রয়েছি।’
৩. সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ অস্ত্র সমর্পণের জন্য ভাগিদ দেন। তিনি নিয়াজির লড়াই চালিয়ে যাবার অনুরোধে সাড়া দেন। নি। এরপর বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল রহিম খান টেলিফোনে একই তাগিদ দেন। তিনি নিয়াজির নির্দেশ পালনে এয়ার কমোডর ইনামুল হুককে নির্দেশ দেন।
৪. নিয়াজি ফরমানকে সাথে নিয়ে মার্কিন কনস্যুলেটে যান এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধানের কাছে একটি বার্তা পাঠান।
৫. তিনি ভারতের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জ্ঞানকারী একটি বার্তা পান। তবে তাতে আত্মসর্পণের দাবিও জানানো হয়।
৬. জেনারেল নিয়াজি ভারতের এ বার্তা হুবহু প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠান।
৭. রাতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট তার কাছে একটি বার্তা পাঠান।
উপরোল্লিখিত ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা বর্ণনা দিয়ে কমিশন ঘোষণা করে যে, তারা স্বীকার করছেন যে, প্রেসিডেন্টই আমাকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কার নির্দেশে এবং কিভাবে আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেছে, সেটাই কমিশনের তদন্তের মূল বিষয়বস্তু ছিল।
কমিশন যখন একথা বুঝতে পেরেছে এবং নিশ্চিত হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের নির্দেশেই আমি আত্মসমর্পণ করেছি তখন আমার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ থাকে না। কমিশনের এ কথাও ঘোষণা করা উচিত ছিল যে, পোলিশ প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে দেশকে এ অপমান থেকে রক্ষা করা যেত এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোই হচ্ছেন এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
কমিশনের রিপোর্টে কী রয়েছে তা আমরা জানি না। তবে দৃশ্যত মনে হচ্ছে এতে হয়তো জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দোষারোপ করে কিছু লেখা হয়েছে, নয়তো সুপারিশগুলো বদলে ফেলা হয়েছে অথবা আমাকে অব্যাহতি দিতে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হয়তো রিপোর্টের সুপারিশগুলো। পরিবর্তন করা হয়েছে নয়তো সুপারিশের বিপরীত কাজ করা হয়েছে। পরে এক বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের সাথে আমার চিহ্ন অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বাকির সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ হয়।
বিচারপতি হামুদুর জানতে চান ব্রিগেডিয়ার বাকির তখন কোথায় আছেন। জবাবে বাকির জানালেন যে, তিনি আর সেনাবাহিনীতে নেই এবং তার রিপোর্টের জন্যই এ পরিণতি হয়েছে। বিচারপতি হামুদুর জানালেন যে, কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে নি। বরং পূর্ব পাকিস্তানে এক অসম্ভব যুদ্ধে তার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে। এ ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, মূল রিপোর্ট গায়েব করে ফেলা হয়েছে।
আমি যতোদূর জানি জনগণকে শান্ত এবং তৎকালের ক্ষমতাসীনদের অপকর্ম চাপা দেওয়ার জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টো এ কমিশন গঠন করেছিলেন। এ কারণে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের ডেপুটি জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেল এ রিপোর্টকে ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
আমার দৃষ্টিতে এটা হচ্ছে একটি অবৈধ তদন্ত। আমরা ছিলাম পাকিস্তান সেনাবাহিনী আইনের আওতায় এবং এ আইনে বর্ণিত সুযোগ-সুবিধা আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা কোনো অপরাধ করি নি এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী আইনের রীতি-নীতি অনুসরণ করা উচিত ছিল।
হামুদুর রহমান কমিশনের একটি বেসামরিক আদালতের নিয়ম-পদ্ধতি মানা উচিত ছিল। বেসামরিক আদালতে সাক্ষীকে বিবাদীর জেরা করার সুযোগ থাকে। আমাদেরকে এ ধরনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করায় সাংবাদিক এ টি চৌধুরী যে মন্তব্য করেছেন তাই সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কমিশন এসব রীতি-নীতি অনুসরণ না করায় তাদের সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও অবৈধ।
শোনা যায় যে, হামুদুর রহমান কমিশনের চেয়ে আরো শক্তিশালী একটি কর্তৃপক্ষ এ কমিশনের রিপোর্ট পরিবর্তন ও সংশোধন করেছে। রিপোর্টের ১৮টি পৃষ্ঠায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর কার্যকলাপের বর্ণনা ছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি।
এরপর তিনি সকল কপি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন এবং তার কার্যকলাপের বিবরণ সম্বলিত পাতাগুলো সরিয়ে সেখানে নতুন পাতা সংযোজন: করা হয়। রেজিস্ট্রারকে তলব করে সংযোজিত পাতাগুলো সত্যায়িত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
রেজিস্ট্রার অস্বীকৃতি জানালে জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে একটি কক্ষে আটক করেন। তাকে সেখানে দানা-পানি ছাড়া রাখা হয়। প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের সরাসরি হস্তক্ষেপে রেজিস্ট্রার মুক্তি পায়। বিচারপতি হামুদুর রহমান হাবিবুর রহমানের কাছে এ ঘটনা প্রকাশ করেছেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, রিপোর্ট উপস্থাপনের পর জুলফিকার আলী ভুে বিচারপতিদের তাদের ব্যক্তিগত মস্তবা হস্তান্তর করতে বলেন। বিচারপতিগণ পরস্পর পরামর্শ করেন এবং বিচারপতি তোফায়েল সকল মন্তব্য ও রেকর্ড হস্তান্তরের পক্ষে মতামত দিয়ে বলেন যে, অন্যথায় তারা অফিসিয়াল সিক্রেট।
আইনে অভিযুক্ত হবেন। তার এ মন্তব্যের পর তারা তাদের কাছে রক্ষিত রেকর্ডপত্র ও মন্তব্যগুলো হস্তান্তর করেন। গোয়েন্দারা (এফএসএফ) কমিশনের অফিসে তল্লাশি চালায় এবং কমিশনের স্টাফ ও অন্যান্যদের বাসা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে আসে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, বিচারপতিরাও জুলফিকার আলী ভুট্টোর হয়রানির ভয়ে তটস্থ ছিলেন।
হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট হিসেবে যা প্রকাশিত হয়েছে তা হচ্ছে কায়েমী স্বার্থবাদীদের মস্তিষ্কপ্রসূত ফসল। প্রকৃতপক্ষে, মূল কপিগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। মাত্র একটি সংশোধিত কপি রক্ষা পেয়েছে। তবে কেউ এ কপির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নয়।
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, হামুদুর রহমান কমিশনের কোনো রিপোর্ট আর অবশিষ্ট নেই। কোনো কপিতে হয়তো এ কমিশনের নাম থাকতে পারে। কিন্তু বিষয়বস্তু হবে সম্পূর্ণ বিকৃত। সংশোধিত তথাকথিত রিপোর্টটি প্রকশিত হলেও ক্ষমতাসীনদের বহু দুষ্কর্ম প্রকাশিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খান আবদুল ওয়ালি খান এক উর্দু দৈনিকে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে যথেষ্ট ফাঁক-ফোকর রয়েছে।’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, সকল পক্ষকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আমি আমার সাক্ষ্যে বলেছিলাম যে, রাজনীতিকরা সংকট সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় সেনাবাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়। আমি বিচারপতি হামুদুর রহমানকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলাম যে, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ইয়াহিয়ার।
ঘৃণ্য ভূমিকায় পাকিস্তান ভেঙে গেছে। আমার বিবৃতি টাইপ করা কপি দেখে। আমি বিস্মিত হই। আমি দেখতে পাই যে, আমার বিবৃতি পাল্টে ফেলা হয়েছে। আমি আবার খসড়া সংশোধন করি এবং পুনরায় টাইপ করে পাঠিয়ে দিই সংশোধিত খসড়ার একটি ফটোকপি এখনো আমার কাছে রয়েছে।
আরও দেখুন: