Site icon History Gurukul [ ইতিহাস গুরুকুল ], GOLN

দ্বিতীয় অধ্যায়: স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের বিকাশ সূচিপত্র

স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের বিকাশ সূচিপত্র

দ্বিতীয় অধ্যায়: স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের বিকাশ ,

দ্বিতীয় অধ্যায়: স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের বিকাশ সূচিপত্র

 

 

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

উপসংহার

বাংলার বস্ত্র শিল্পের কিংবদন্তির মসলিন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু আগে। তাঁত শিল্পের সোনালি সুদিন, বিশ্বব্যাপী বস্ত্র রপ্তানি বাণিজ্য অতীত দিনের গল্প, শেষ হয়েছে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, পাকিস্তানি শাসনের অবসান হয়েছে- সেটাও প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। স্বাধীন বাংলাদেশে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। একুশ শতকে এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে অনেকখানি আশাবাদী হওয়ার অবকাশ রয়েছে।

গত ১০০ বছরের তাঁত শিল্পের ইতিহাস পুননিরীক্ষণ করলে দেখা যায় খুব বেশি আশাহত হওয়ার কিছু নেই। গত শতকে বাংলাদেশের তাঁত শিল্প নানা রকম পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে তাঁত শিল্প টিকে আছে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, যে তুলা এখন তাঁতিগণ ব্যবহার করেন তা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। যে সুতা ব্যবহার করা হয় তার একটা বড় অংশ আসে দেশের বাইরে থেকে।

যদিও বর্তমান সরকার তুলা উৎপাদন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে যার কারণে তুলার চাষ ও উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর যে সুতা দেশে তৈরি হয়ে থাকে তার প্রযুক্তি আমদানি করা অন্য দেশ থেকে। যে রং দিয়ে দেশে সুতা বা কাপড়গুলো বিচিত্র বর্ণে রঙ হয় তা অন্য দেশ থেকে আনতে হয়। যে তাঁত যন্ত্র দেশে ব্যবহার করা হয় তাও দেশি প্রযুক্তি নয়; যদিও তা এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের যা নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতে পারি, আশাবাদী হয়ে উঠতে পারি তাহলো এ দেশের তাঁতি সম্প্রদায়।

নানা রকম পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েও বাংলাদেশের তাঁতিরাই বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। তারা বারবার নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে, নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল আত্মস্থ করেছে এবং টিকিয়ে রেখেছে বাংলদেশের তাঁত শিল্প। ফলে যতদিন এদেশের তাঁতি সম্প্রদায় আছে, ততদিন খুব বেশি আশাহত হওয়ারও কিছু নেই। তাঁতিরাই এ দেশের তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে।

বাংলাদেশে তাঁতি ও তাঁত শিল্প থাকবে, সরকারি উদ্যোগ বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলো যেমন: বেশ কয়েকটি নতুন তাঁতশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপন, ডিপ্লোম ইন টেক্সটাইল কোর্স চালু, ফ্যাশন ডিজাইন ট্রেনিং ইন্সটিটিউট স্থাপন, নক্সী পল্লী স্থাপন, মসলিন প্রযুক্তি পুন:রুদ্ধার প্রকল্প চালুকরণ, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি (Citizen Charter) ঘোষণা, তাঁত বস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণে সরকারি সহযোগিতা এবং সর্বোপরি তাঁত শিল্প সম্পৃক্ত মানব সম্পদ উন্নয়ন লক্ষ্যে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক তাঁতী, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে সকল বিবেচনায় ভবিষ্যতে তাঁত শিল্প হবে আরও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এবং উন্নত।

বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ফ্যাশন হাউজগুলোয় পোষাক তৈরীতে তাঁত শিল্পে পণ্যের অধিক ব্যবহার শহরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সুতি তাঁতবস্ত্রের প্রতি আগ্রহ দেশের তাঁত শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময় করে তুলেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে হস্তচালিত তাঁত শিল্প (Handloom Industry) একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এই অধ্যায় আলোচনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের শুরু থেকেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকার এবং অন্যান্য সব সরকারের আমলেই এই তাঁত শিল্পকে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করা হয়েছে।

তাঁতশিল্পে উৎপাদিত সুতীবস্ত্র সুলভ মূল্য হওয়ায় নিম্নবিত্ত, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাজে যেমন সমাদৃত তেমনি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সচেতন মহলে তাঁতশিল্পে উৎপাদিত বস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমান সরকার এবং বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এই শিল্পের উন্নয়নে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে এসেছেন। পরিবেশ বান্ধব ও পরিধানে অনেক আরামদায়ক বিধায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী তাঁত বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

 

কাজেই বলা যায় ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী বস্ত্র সরবরাহ এবং তাঁতীদের উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে পারলে এ শিল্প অনেকদূর এগিয়ে যাবে। তাঁত বোর্ডের গৃহীত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে বিপুল পরিমাণ গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তাঁত বস্ত্রের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। ফলে তাঁতীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version