আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ শুক্কুর কারাগারে ভুট্টো। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
শুক্কুর কারাগারে ভুট্টো
শুকুর কারাগারে ভুট্টো
জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ভেলুর কারাগারে আনা হয় সামরিক আইন জারির পর। আমি তখন সেখানেই। এটা ছিল আমার জন্য একটি স্মরণীয় ঘটনা। তিনি আমাকে দেখেই এগিয়ে আসেন এবং আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। বললেন, “নিয়াজি, আপনার প্রতি রূঢ় হওয়ায় আমি সত্যিই দুঃখিত।
আমাকে ভুল পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।’ আমি তাকে আমার কক্ষে নিয়ে যাই এবং এক কাপ গরম কফি দিই। এরপর আমরা আলাপ করতে শুরু করি। তাকে উদ্বিগ্ন মনে হয় নি। তিনি বললেন, “নিয়াজি আপনি ফিরে গেলে আমরা একসাথে কাজ করবো।
আমি বললাম, ‘জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো, এ কী করে সম্ভব? আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা এবং আমরা কম-বেশি একে অপরের শত্রু।’ তিনি বললেন, “নিয়াজি আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম এবং সংশোধনের চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু আপনি আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
যখন আপনি আমার কাছে প্রথম দিন এসেছিলেন, সেদিন আমি প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে, এটা একটি সামরিক বিপর্যয় এবং এ জন্য সেনাবাহিনী দায়ী। আমি আপনাকে কূটনৈতিক দায়িত্ব দিচ্ছি।
কিন্তু আপনি বললেন, এটা একটি রাজনৈতিক পরাজয়। দ্বিতীয় বার আমি আপনার কাছে কাইউম খানকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি আপনাকে পাকিস্তানের বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি এ প্রস্তাবও নাকচ করে দেন।’
তিনি আরো বললেন, ‘আমি আপনার সার্ভিস রেকর্ড দেখেছি এবং আপনি পূর্ব পাকিস্তানে কীভাবে যুদ্ধ করেছেন তা পর্যালোচনা করেছি। অতি সামান্য সম্পদ নিয়ে আপনি এক বিরাট দায়িত্ব পালন করেছেন। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো আপনার বার্তা আমি পাঠ করেছি।

এসব বার্তা পাঠে এ ধারণাই হয় যে, বার্তা প্রেরক অত্যন্ত সাহসী, অভিজ্ঞ, ধৈর্যশীল ও একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। আমি টিক্কার পরে আপনাকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিযুক্ত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি আমার কাছে ধরা দেন নি।
আমি বললাম, ‘আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে পারি নি। তাই আপনার কাছে যাই নি।’ তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি এখনো কারাগারে কেন? আমি জবাব দিলাম, “জিয়া আমাকে রাজনীতি ছাড়ার মুচলেকা দিতে বলেছিলেন, কিন্তু আমি মুচলেকা দেই নি। তাই আমি এখানে।’
আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, ‘এখন আপনি বলুন, আপনি আমাকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আপনি আমাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন। আপনার সমাবেশে জনতার ভীড় এবং আপনার ভাষণ পিএনএ’র আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করছিল। পিএনএ’র আন্দোলনেকে দুর্বল করার জন্যই আমরা আপনাকে গ্রেফতার করি।’
জুলফিকার আলী ভুট্টোকে শুক্কুর কারাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় সন্ধ্যায়। তিনি কারাগারের ডাক্তার (সাবেক সেনা কর্মকর্তা) এর মাধ্যমে আমার কাছে একটি বার্তা পাঠান। বার্তায় তিনি বলেন, আমাকে কফি পান করানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার সাথে আমার হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা আমার চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেলে একত্রিত হবো আমরা। আমি আপনার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবো।’আমার মত-বিরোধ ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে। তাকে মোটেও পছন্দ করতাম না আমি।
কিন্তু তাকে ফাঁসি দেওয়ায় আমি খুব দুঃখ পাই। এ ধরনের মৃত্যু তার হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত জিয়ার মতো একজন ক্ষমতা দখলকারীর হাতে নয়। জিয়া না ছিলেন একজন দক্ষ জেনারেল, না ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। তা ছাড়া তিনি দেশেরও কোনো কল্যাণ করতে পারেন নি।
তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নি। তিনি ইসলাম নিয়ে কিছু রং তামাশা করেছিলেন। জেনারেল জিয়া দেশে কালাশনিকভ রাইফেল ও হেরোইনের সংস্কৃতি চালু করেন।
তার আত্মীয় স্বজনদের ধনী হওয়ার সুযোগ দেন এবং ভারতের কাছে সিয়াচেন ছেড়ে দেন। জিয়াউল হকের দ্বারা দেশের কোনো উপকার হয় নি। বরং জুলফিকার আলী ভুট্টোর মতো একজন দক্ষ রাজনীতিক কে হারায় দেশ।
আরও দেখুন: