প্রথম অধ্যায়: বাংলার তাঁতশিল্পের বিকাশ সূচিপত্র,
প্রথম অধ্যায়: বাংলার তাঁতশিল্পের বিকাশঃ প্রাচীনকাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত
- বাংলার তাঁতশিল্পের বিকাশের ভূমিকা
- তন্তু, তাঁত ও তাঁতী শব্দের উৎপত্তি
- তাঁতশিল্পের উদ্ভব: সম্বন্ধে বিভিন্ন কিংবদন্তী
- তাঁত শিল্পের সূত্রপাত
- সিন্ধু সভ্যতায় রেশমের নমুনা আবিষ্কার
- উৎসের ভিত্তিতে প্রাচীন বাংলায় তাঁত শিল্পের সূত্রপাত ও প্রসার
- সুলতানী যুগ
- মূঘল যুগ
- মুঘল যুগে মসলিন
- মুঘল দরবারে পাঠানো মসলিনের তালিকা
- মসলিনের উৎকর্ষতার বিভিন্ন দিক
- বৃটিশ আমল (১৭৫৭ থেকে ১৯০৫ পর্যন্ত)
- বৃটিশ বাংলার রেশম তাঁত শিল্প
- ব্রিটিশ নথিপত্রে তাঁত শিল্পের বিবরণ
- বর্গ বাণিজ্য ও পর্তুগিজ বণিক
- আমেরিকার সাথে বস্ত্র বাণিজ্য
- বৃটিশ তাঁতীদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, সরকারের আইন প্রণয়ন এবং বা ব্যবসা সংকোচন
- চ্যালেঞ্জের মুখে তৎকালীন অর্থনীতি ও তাঁতশিল্প
- বাংলার তাঁতশিল্পের পুনরুত্থান
- দেশ বিভাগ ও পরবর্তী সময়ের তাঁত শিল্পের প্রবৃদ্ধির চিত্র

উপসংহার
এই অধ্যায়ে তাঁত শিল্পের উৎপত্তি এবং বিকাশ আলোচনা করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁত শিল্প ছিল ঢাকা কেন্দ্রিক এবং বাংলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। তাঁতবস্ত্র বিশ্বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ডাচ, আর্মেনিয় ফরাসী ও পর্তুগীজদের সাথে তাঁতবস্ত্র কেন্দ্রিক বাণিজ্য বিদ্যমান ছিল। প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তাঁত ও বস্ত্র শিল্প সংক্রান্ত ব্যবসা বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ সন্নিবেশ করা হয়েছে।
বিভিন্ন রাজদরবার ও শৌখিন শ্রেণীর মাঝে মসলিন সমাদৃত ছিল। মোঘল আমলে বাংলার বস্ত্র শিল্পের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও ছিল লক্ষ্যণীয়। তাঁতশিল্প ও তাঁতীদের প্রতি বৃটিশ ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বৃটিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কে আলোচনাসহ স্বদেশী আন্দোলন কিভাবে তাঁতশিল্পে প্রভাব ফেলেছিল। তা জানা যায়। বাংলার স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অনেক বাঙালি উদ্যোক্তা বস্ত্রকল স্থাপন করে।
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্য তৎকালীন শাষকগোষ্ঠীর উদ্যোগ, বিশেষ করে সুতার কল স্থাপন এবং বিভিন্ন জরিপ ও শুমারির মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়। তৎকালীন সরকারগুলো প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে পরিকল্পিতভাবে দেশীয় বস্ত্র শিল্পকে সহযোগিতা করা যায়। শুমারি ও জরিপগুলোতে দেখা যায়, ১৯৫৬/৫৬-৫৯/৬০ সালের তুলনায় ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তাঁতশিল্পে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। অত্র অঞ্চলের সাধারণ জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত শাড়ী, লুঙ্গি, গামছা তাঁতশিল্পের উৎস থেকেই চাহিদা মিটতো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বস্ত্ৰ কল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পশ্চিম পাকিস্তানী অনেক মালিক মিল বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এসব কারণে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সুতার সংকট দেখা দেয়। এই সংকট মোকাবেলায় ১৯৭২ সালের পর থেকে এই শিল্পটির উন্নতির জন্য সরকারি পদক্ষেপ নেয়া হয়। যেমন: স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা, ন্যায্য মূল্যে তাঁতীদের মধ্যে আমদানীকৃত সুতা ও রং বিতরণ, আঞ্চলিক পর্যায়ে পণ্য বিক্রির বাজার স্থাপন করা হয়।
৮০’র দশকে এসে উপর্যুপুরি সুতি তাঁতবস্ত্রের ব্যবহার্য্য, সুতার দাম বৃদ্ধি, পাশাপাশি বিদেশী নাইলন সুতা সহজলভ্য হওয়ায় তাঁতশিল্প সংকটের সম্মুখীন হয়। ঐ সময়টাতে দেশের পাওয়ারলুমের প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়। প্রথমদিকে পাওয়ারলুমে শুধুমাত্র পলিয়েষ্টার কাপড় উৎপাদিত হতো। এসবের কারণে আশির দশকে কোন কোন এলাকায় তাঁত শিল্পে ক্রমাবনতি দেখা গেছে। অনেক এলাকায় তাঁতীরা তাঁতের বস্ত্র উৎপাদন প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। গোটা বস্ত্রশিল্প মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।
তবুও নানাবিধ বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে এদেশের তাঁতী সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক দেশপ্রেমিক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিজস্ব প্রচেষ্টায় এ শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। উদ্যোক্তাদের একটি অংশ পাওয়ারলুমে তাঁতবস্ত্রের অনুরূপ সুতিবস্ত্র উৎপাদন শুরু করে। তারা হস্তচালিত তাঁতের পাশাপাশি পাওয়ারলুম (বিদ্যুৎ চালিত তাঁত) স্থাপন করে সুতিবস্ত্র উৎপাদনে নুতন মাত্রা যুক্ত করে। এতে তাঁতীগণ একধাপ এগিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি আজও সুনামের সাথে টিকে আছে।
আরও দেখুনঃ