ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এই বিষয়টি এসএসসি [ SSC ] নবম শ্রেণী [ Class 9] এবং দশম শ্রেণী [Class 10] এর ইতিহাস [History] বিষয় এর নবম অধ্যায়ের [Chapter 9] পাঠ।
ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ
ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বলতে মূলত আঠারো শতকের শেষের দিকে (১৭৬০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) বাংলাতে ফকির ও সন্ন্যাসী বা মুসলিম ও হিন্দু তাপসদের তৎকালীন ব্রিটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলনকে বোঝানো হয়ে থাকে। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন মাদারিপন্থী পীর মজনু শাহ। ইতিহাসবিদগণ বিদ্রোহটির পটভূমি নিয়েই শুধু দ্বিধা বিভক্তই নন, বরং ভারতবর্ষের ইতিহাসে এর গুরুত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা মতদ্বৈততা লক্ষণীয়।
যামিনী মোহন ঘোষ ছাড়া সকল দেশীয় ইতিহাসবিদ একে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার বলে মনে করেন যেহেতু ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর খাজনা উত্তোলনের কর্তৃত্ব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
কিন্তু ইংরেজ লেখকরা শুরু থেকেই এ বিদ্রোহকে দস্যুদের লুটতরাজ বলে চালাতে চেয়েছে। অন্যদিকে্, ইংরেজের অনুগত, রেকর্ডবিভাগের কর্মচারী যামিনী মোহন ঘোষ উপনিবেশী প্রশাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে একদল উচ্ছৃঙ্খল ফকির ও সন্ন্যাসীর চুরিচামারি ও লুটতরাজ বলে আখ্যায়িত করেন। এ জন্য ভারতের গবেষক গৌতম ভদ্র তাকে ব্যঙ্গ করে ‘দাঙ্গা হাঙ্গামা’ ও ‘লুটতরাজে’র ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহতে ধারাবাহিকভাবে যে বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে তার মধ্যে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ প্রথম। এছাড়া ১৭৯৯ সালের চুয়াড় বিদ্রোহ ১৮৩১ ও ১৮৩২ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বাংলায় প্রথম বৃটিশ-বিরোধী সংগ্রামের সূচনা করে। ফকির মজনু শাহ রাজনৈতিকভাবেও সচেতন ছিলেন এবং বৃটিশদেরকে বহিরাগত জবরদখলকারী মনে করতেন।
তিনি বৃটিশদের অত্যাচারের প্রতিকার চেয়ে নাটোরের রাণী ভবানীর নিকট এইমর্মে পত্রও লেখেন যে, ফকিররা তাকে দেশের শাসক বলে মানেন। এটি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ। অসিত নাথ চন্দ্র যথার্থই লিখেছেন: “মজনু শাহর বিদ্রোহ তার সময়ে ব্যর্থ হলেও একে পরবর্তীকালে সংগঠিত স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত বলে ধরে নেয়া যায়।”
ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ