আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ পেনশন পুনরুদ্ধার। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
পেনশন পুনরুদ্ধার
পেনশন পুনরুদ্ধার
সরদার ফারুক আহমেদ খান লেখারি
প্রেসিডেন্ট, ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান।
প্রেসিডেন্টের সচিবালয়, ইসলামাবাদ।
বিষয় : পেনশন পুনরুদ্ধার- জেনারেল অফিসার্স
জনাব,
১. পত্র-পত্রিকায় সম্প্রতি আপনার একটি বিবৃতি পাঠ করে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এ আবেদন পেশ করছি। আপনার বিবৃতিতে আপনি বলেছেন যে, ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথে সঙ্গতি রেখে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে ন্যায়বিচার পাবার আশায় কলম তুলে নিয়েছি। আমি জানি যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত রাখাই প্রেসিডেন্টের মুখ্য দায়িত্ব। অন্যায়ের প্রতিবিধান করাই ইসলামের শিক্ষা। আমি আপনার কাছে আবেদন করতে আরো অনুপ্রাণিত হয়েছি এ কারণে যে, প্রায় সিকি শতাব্দী আগে পূর্ব পাকিস্তানে বিপর্যয় ঘটেছে এবং ইতোমধ্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
২. ১৯৭১ সালে জাতীয় ট্রাজেডি এবং পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পরিণামে আমাকে ১৯৭৫ সালের ৫ই মে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করা হয় এবং আমাকে আমার কষ্টার্জিত পেনশন থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমাকে পেনশন থেকে বঞ্চিত করায় শুধু আমাকেই নয়, একই সাথে আমার গোটা পরিবার এবং আমার আত্মীয় স্বজন যারা আমার আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল তাদেরকেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
এক প্রশাসনিক নির্দেশে কোনো কারণ না দেখিয়ে আমাকে সার্ভিস থেকে অপসারণ করা হয়। আমি কোর্ট মার্শাল গঠন করার সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু আমার এ সুপারিশ গ্রহণ করা হয় নি। কোর্ট মার্শাল গঠন করা হলে গোটা যুদ্ধ পরিচালনায় হাই কমান্ডের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং অনেক অপ্রিয় সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়তো।
হাই কমান্ড এবং আরো অনেকে তখন থেকে যারা সুখে-স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছে, তাদের সমষ্টিগত ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে কেবল আমাকে একা । আমাকে এককালীন একটি পেনশন দেওয়া হয়। এ পেনশন এতোই সামান্য যে, তা কোনো ক্রমেই নিয়মিত পেনশনের পরিপূরক নয় এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের মর্যাদা ও অধিকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
৩. প্রিয় প্রেসিডেন্ট, মুখোশধারীদের চেহারা আড়াল করার জন্য বহু নির্দোষ লোকের মতো আমাকেও শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এসব নির্দোষ লোক তাদের জীবদ্দশায় পুনর্বাসিত হয়েছেন। এ জন্যই আমি আপনার কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করছি। আমাকে অজ্ঞাত ও অশ্রুত কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
৪. আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে সুবিচারের আশায় কিছু ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছি :
ক. আমি কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে চেয়েছিলাম। কোর্ট মার্শাল গঠন করা হলে সত্য প্রকাশিত হতো এবং প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ে যেত। কিন্তু আমাকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে দেওয়া হয় নি। তারা আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারে নি।
কোর্ট মার্শাল গঠন করা হলে যুদ্ধের শুরুতেই কেন পশ্চিম পাকিস্তান ব্যর্থ হয়েছিল, সেই সত্য উন্মোচিত হতো এবং অন্যদিকে, এ সত্যও ফুটেও উঠতো যে, ভারতীয় সৈন্যদের সাথে আমাদের শক্তির অনুপাত ১০:১ হওয়া সত্ত্বেও ইস্টার্ন কমান্ড প্রায় ১ বছর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে লড়াই করেছে। পশ্চিম রণাঙ্গনে উভয় পক্ষের শক্তির অনুপাত ছিল ১:১।
খ. ইসলামের ইতিহাসে এই প্রথমবার শত্রুর সাথে আমাদের সৈন্য ও সম্পদে সমতা ছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের জন্য পরিস্থিতিও ছিল অনুকূল। সার্বিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সৈন্যরা তাদের অবস্থান গ্রহণ করে।
সার্বিক জাতীয় পরিকল্পনার মূল বিষয়বস্তু ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ করা হবে পশ্চিম পাকিস্তানে। সীমিত সম্পদ ও সৈন্য থাকায় ইস্টার্ন গ্যারিসনের ভূমিকা ছিল শুধু টিকে থাকা। অন্যদিকে মূল ও চূড়ান্ত লড়াই হবে পশ্চিম রণাঙ্গণে। কারণ অধিকাংশ সম্পদ ও সৈন্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। এ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ছিল অনুগত, পশ্চাৎভাগ ও পার্শ্বভূমি ছিল নিরাপদ এবং গোটা নৌ ও বিমান বাহিনীও নিয়োজিত ছিল সেখানে।
গ. আমাদের সুবিধামতো ও পছন্দসই সময়ে যুদ্ধ শুরু করেও পশ্চিম রণাঙ্গনে আমরা শত্রু ভূখণ্ড দখল করার পরিবর্তে নিজেদের সাড়ে ৫ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ভূখণ্ড হারাই। মাত্র ১০ দিনের লড়াইয়ে পশ্চিম রণাঙ্গনে আমাদের এ বিপর্যয় সামরিক দিক থেকে অগ্রহণযোগ্য, অবিশ্বাস্য ও ক্ষমার অযোগ্য।
ঘ. পক্ষান্তরে, চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইস্টার্ন গ্যারিসন সীমিত সম্পদের সাহায্যে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সাথে মিশন সম্পন্ন করে। কিন্তু আমাদের হাই কমান্ড অত্যন্ত অনুকূল অবস্থায় থেকেও মনোবল হারিয়ে ফেলে এবং পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান গ্যারিসনের সর্বনাশ ডেকে আনে।
পশ্চিম পাকিস্তানকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার স্বার্থে আমাদেরকে পূর্ব পাকিস্তান পরিত্যাগ এবং শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণের চরম গ্লানি মেনে নিতে হয়। যাদের ভুলে ও ব্যর্থতায় পশ্চিম পাকিস্তানে বিপর্যয় ঘটেছে তাদের সবাই ছাড়া পেয়ে গেছে।
অনেককেই সার্ভিসে রাখা হয় এবং পদোন্নতি দেওয়া হয়। কাউকে কাউকে লোভনীয় চাকরিও দেওয়া হয়। কাউকে কোনো প্রশ্ন করা হয় নি। কারো বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় নি। কিন্তু আমি জেনারেল নিয়াজি অত্যন্ত সফলতার সাথে ন্যস্ত সব দায়িত্ব সম্পন্ন করেও অন্যান্যদের ভুলের জন্য শাস্তি পেয়েছি কেবল একা।
ঙ. সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল টিক্কা খান এক বিবৃতিতে বলেছিলেন যে, জেনারেল নিয়াজিকে কোর্ট মার্শালে বিচার করা সম্ভব। নয়। কারণ, তার বিরুদ্ধে কোনো উল্লেখযোগ্য অভিযোগ নেই।
চ. হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট হচ্ছে একটি অতি গোপনীয় দলিল । কিন্তু এ রিপোর্টের অংশবিশেষ বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ রিপোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে:
- ১৯৭১ সালে বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু বলীর পাঁঠা বানানো হয় কেবল আমাকে।
- আত্মসমর্পণ করা হয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে। পশ্চিম পাকিস্তানে শোচনীয় পরাজয়ের আংশকায় প্রেসিডেন্ট এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
- ‘পিপিপি’র ৭ সদস্যের একটি কমিটির সুপারিশে এ রিপোর্ট গোপন রাখা হয়।
- এ রিপোর্টের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই এবং বাস্তবায়নের জন্য কোনো নির্বাহী আদেশ দিয়ে তা অনুমোদন করা হয় নি।
- হামুদুর রহমান কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স ছিল সীমিত (বিপর্যয়ের সব দিক তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করা হয় নি)।
- জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে ‘ক্ষমতা দখলকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ছিলেন সংকটের প্রধান স্থপতি। তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন
ছ. পাকিস্তানের ব্যবচ্ছেদ ঘটানোর জন্য জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে দোষারোপ করা হলেও তিনি দুটি পেনশন ভোগ করেন (প্রেসিডেন্ট এবং সি-ইন-সি) এবং সরকারি খরচে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় বিদেশে। মৃত্যুর পর তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়। অন্যদিকে, আমাকে পেনশন থেকে বঞ্চিত করা হয়। কারণ, মাত্র দুই মাস সময়ে আমি :
- পূর্ব পাকিস্তানে সরকারি কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্ব কেউ নিতে চান নি। আমার আগে দুই জন সিনিয়র জেনারেল বার্ধ হয়েছিলেন।
- জীবন যাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনি।
- গেরিলা ও ভারতীয় অনুচরদের উচ্ছেদ করি। এর আগে তাদের মনোবল ছিল খুব উঁচু এবং হামলা করার সামর্থ্য রাখত তারা। আমিই হচ্ছি সেই জেনারেল যার সৈন্যরা দুই মাসের কম সময়ে বন্ধু অভিযানে গেরিলাদের পরাজিত করে।
- জেনারেল ফজল মুকিম তার বইয়ে আমাদের সাফল্যকে একটি অলৌকিক’ ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
- শত্রুদেরকে কোণঠাসা করা হয় এবং পরে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। এ অভিযানে নিয়মিত সৈন্য ছিল ৩৪ হাজার এবং বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিল আরো ১১ হাজার। সব মিলিয়ে মোট ৪৫ হাজার। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় জনগণের পূর্ণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩ লাখ সৈন্যের প্রয়োজন ছিল।
জ. ১৯৭১ সালে যে নাগাদ সামরিক ও রাজনেতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এটা ছিল একটি রাজনেতিক নিষ্পত্তির আদর্শ সময়। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের বেদিতে পাকিস্তানের ৪৫ হাজার সৈন্যকে কুরবানি করা হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান পরিত্যাগের অভ ইচ্ছায় রাজনৈতিক নিষ্পত্তির এ সুযোগ হারানো হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে একটি সরকারবিহীন অবস্থায় পরিত্যাগের অশুভ লক্ষ্য অর্জনে এ পরিকল্পনা করা হয় ।
ভারতীয়রা জয়লাভ করলে এবং নিয়াজি যুদ্ধে পরাজিত হলেই কেবল পূর্ব পাকিস্তানকে সরকারিহীন অবস্থায় পরিত্যাগ করা সম্ভব। কিন্তু জান্তা যখন দেখতে পেল যে, আমি রণাঙ্গনে পরাজিত হবো না তখন আমাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। আমি এ নির্দেশ পালনে অস্বীকার করায় আমাকে পশ্চিম পাকিস্তানে বিপর্যয়ের কথা শোনানো হয়। তারা দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ এবং ধনী পশ্চিম পাকিস্তান শাসন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঝ. সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান ১৯৭১ সালের মে মাসে ভারতের মাটিতে যুদ্ধ সম্প্রসারণে আবার পরিকল্পনা পর্যালোচনা করেন এবং এ পরিকল্পনাকে সুষ্ঠু ও কার্যকর বলে অভিমত দেন। কিন্তু সরকারি নির্দেশে আমার পরিকল্পনা পরিত্যক্ত হয়। তখন আমার প্রতি
সরকারি নির্দেশ ছিল :
১. ভারতের সাথে প্রকাশ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে না। ভারতীয় ভূখণ্ডে আমাদের সৈন্যরা প্রবেশ করতে পারবে না এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণও করা যাবে না।
২.শক্তি প্রয়োগে ভারতীয়দের পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ রোধ করতে হবে।
ঞ. ১৯৭১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর আমি শেষ ব্যক্তি ও শেষ বুলেট’ অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবার চূড়ান্ত নির্দেশ দিই। এ নির্দেশের অর্থ ছিল লড়াই করে মৃত্যুবরণ করা। কোনো অফিসার অথবা সৈন্য এ নির্দেশ মেনে নিতে দ্বিধা করেন নি। সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এ নির্দেশকে ‘আত্মসমর্পণের নির্দেশে পরিবর্তন করতে হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হামিদ ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ডা. মালিক আমাকের আত্মসমর্পণে রাজি করান।
ডা. মালিক আমাকে বলেছিলেন যে, আত্মসমর্পণে বিলম্ব করলে পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধে আরো বিপর্যয় ঘটবে। তারা যে-কোনো মূল্যে পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধ বিরতি কামনা করছিল। ভীতি ও চাপ এমন মাত্রায় পৌঁছে যে, সরকার পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে দিতে অধীর হয়ে ওঠে।
সুতরাং আমাদের মূল ঘাঁটি পশ্চিম পাকিস্তানকে ছিন্নভিন্ন হওয়া এবং ওয়েস্টার্ন গ্যারিসনকে অধিকতর হামলা থেকে রক্ষায় আমি আমার সুনাম, আমার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মহান ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিই এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আত্মসমর্পণে রাজি হই। সে আমরা কোথাও পরাজিত হই নি এবং কোথাও কোথাও আমরা ভারতীয়দের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলাম।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন জাপানি বাহিনীর ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটেছিল। পর্যাপ্ত নৌ ও বিমান সহায়তা এবং মিত্র বাহিনীর তুলনায় সামরিক ও কৌশলগতভাবে অধিকতর সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও জাপানের ৫৮তম ডিভিশন সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছিল। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আনবিক বোমা নিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন জাপানি কমান্ড তাদের মাতৃভূমিকে অধিকতর ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় নিঃশর্তভাবে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
৫. প্রিয় প্রেসিডেন্ট, সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে আমার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা ছিল যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে। একটি হচ্ছে, জাতীয় লক্ষ্য যা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় সরকার নির্ধারণ করেছিল এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সামরিক বরাদ্দ। আমাকে যে সম্পদ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো ৩টি বাহিনীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। এ সম্পদের হিসাব থেকে এটাই নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবে যে, যে কোনো মানদণ্ডে ইস্টার্ন গ্যারিসনের সাফল্য সন্তোষজ পাকিস্তান
ক. পদাতিক ডিভিশন (৩টি (দুটি ডিভিশনের ভারী অস্ত্র ছিল না)-0১টি রেজিমেন্ট
খ. ট্যাংক রেজিমেন্ট (৩ স্কোয়াড্রন এম-২৪ মডেলের ট্যাংক,)৭৫ মিলিমিটার কামান
গ. বিমান বাহিনী-১ স্কোয়াড্রন (পুরানো মডেলের এফ-৮৬)
ঘ. বিমান ক্ষেত্র
ঙ. নৌবাহিনী-৪টি গানবোট
ভারত
ক. পদাতিক ডিভিশন-১২টি ডিভিশন (পূর্ণাঙ্গ ডিভিশন)
খ. ট্যাংক রেজিমেন্ট-৬ টি রেজিমেন্ট
১৮ স্কোয়াড্রন, ১০৫ মিলিমিটার
কামান সজ্জিত এবং নৈশকালে চলাফেরায় সক্ষম)
গ. বিমান বাহিনী-১৪ স্কোয়াড্রন (এফজিএ)
ঘ. বিমান ক্ষেত্র ৩টি, একটি বিমানবাহী রণতরী
ঙ. নৌবাহিনী
নোট
১৯৭১ সালের মার্চ থেকে মুক্তি বাহিনীর ছদ্মবেশে বিদ্রোহীদের সহায়তাদানকারী নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত ভারতীয় সৈন্যদের এ হিসাবের মধ্যে ধরা হয় নি। স্থানীয় জনগণ শুধু আমাদের প্রতি বৈরীই নয়, তারা আমাদের সাথে লড়াই করেছে।
৬. শত্রু বাহিনীর কমান্ডার, বিদেশি প্রচার মাধ্যম এবং আমাদের নিজস্ব হাই কমান্ডও পূর্ব পাকিস্তান গ্যারিসন এবং এ গ্যারিসনের কমান্ডারের প্রশংসা না করে পারে নি। এসবের কিছু হচ্ছে :
ক. “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন প্রবীণ সৈনিক, লম্বা-চওড়া, সুঠাম ও আত্মবিশ্বাসে তিনি বলীয়ান। সৈনিকদের জেনারেল হওয়ার সুনাম তার রয়েছে। তিনি প্রাণবন্ত একজন মানুষ।” (ইন্ডিয়ান আর্মি আফটার ইন্ডিপেনডেনস, পৃষ্ঠা ৪৩৮)
খ. প্রদীপ্ত নিয়াজিকে সৈনিকদের জেনারেল হিসেবে চিত্রিত করা হয়। “(দ্য লিবারেশন অব বাংলাদেশ, মেজর জেনারেল সুখ সিং)
গ. “চৌকস গার্ড অব অনার প্রদান করায় অ্যাডমিরাল মাউন্টব্যাটেন এ মেজরের প্রশংসা করেন এবং তার কৃতিত্বপূর্ণ যুদ্ধের রেকর্ড সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। ১৯৪৩ সালে বিলাতে প্রেরিত সরকারি চিঠিপত্রে তার কথা উল্লেখ করা হয় এবং কোহিমার জঙ্গলে অসাধারণ বীরত্ব ও নেতৃত্ব প্রদর্শনের জন্য তাকে মিলিটারি ক্রস’-এ ভূষিত করা হয়।(ফৌজি আকবর, ২০শে মে ১৯৪৬)
ঘ. “পূর্ব পাকিস্তানে শত্রুর সর্বশেষ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি এবং আপনার কমান্ডের সৈন্যরা যে বিস্ময়কর সাহস প্রদর্শন করেছেন তাতে আমি গভীরভাবে অভিভূত।”(সি.ইন.সি. ইয়াহিয়া, ২৯ নভেম্বর ১৯৭১)
ঙ. “পূর্ব পাকিস্তানে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মুখে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছে তা অদম্য সাহসের একটি মহাকাব্য এবং ইসলামের সৈনিকদের সর্বোচ্চ ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ইতিহাসে লিপিবন্ধ থাকবে।” (১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়ার ভাষণ)
চ. ” বিশ্বে তার মতো লোক খুব কমই আছে। “মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ শিরোনামে এক খবরে বলা হয় যে, জেনারেল নিয়াজি ও তার সৈন্যদের প্রতিরোধ যুদ্ধের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সরবরাহ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত কোনো সেনাবাহিনী এমন অতুলনীয় বীরত্বের সাথে এতো দীর্ঘদিন লড়াই করে নি । (স্টার স্পেশাল, ওয়াশিংটন, ডিসেম্বর ১৯৭১)
৭. মেজর থেকে পরবর্তী পদগুলোতে আমার দ্রুত পদোন্নতি হয়েছে এবং উপমহাদেশ বিভক্তির আগে ও পরে উভয়কালে অবধারিতভাবে বিশেষ দায়িত্ব ও মিশনের জন্য আমাকে বাছাই করা হতো। এসব মিশন শেষে প্রশংসা ও পদক দুটিই পেতাম আমি। আমি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্ত অফিসার এবং নিম্নবর্ণিত রেকর্ড অনুযায়ী আমি আমার সমান বয়স ও একই সার্ভিস গ্রুপে বিশ্বের যে কোনো সেনাবাহিনীর যে কোনো অফিসারের সাথে নিজেকে সহজেই তুলনা করতে পারি :
ক. দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ
- এমসি (মিলিটারি ক্রস)। ভারত থেকে প্রেরিত ব্রিটিশ সরকারি চিঠিপত্রে আমার কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়। সাহসিকতা, দক্ষতা, সহিষ্ণুতা ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসাপত্রও প্রদান করা হয়। (ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কোনো ভারতীয় অফিসারের জন্য এরূপ পদক ও প্রশংসাপত্র লাভ একটি বিরল ঘটনা)।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আসামে এক দ্বন্দ্ব যুদ্ধে হাতাহাতি লড়াইয়ে আমার হাতে একজন জাপানি মেজর নিহত হয়। এ ঘটনার পর আমাকে ‘টাইগার’ খেতাব দেওয়া হয়। এ খেতাব পরিণত হয় আমার ডাক নামে। লেফটেন্যান্ট থেকে আমাকে সরাসরি মেজর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।(পাকিস্তানে যুদ্ধ পরিচালনায় কৃতিত্বের জন্য আমাকে তারিক বিন জিয়ান’ নামে ডাকা হতো।)
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমি একটি রাজপুত রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলাম। আমার রেজিমেন্ট আমাকে ‘অমর সিং রাঠোর’ নামে ডাকতো।
খ. পাকিস্তান অপারেশন
- সিন্ধুতে পঙ্গপাল দমন অভিযানে সাফল্যের জন্য আমাকে ‘সিতারা ই- খিদমত’ পদকে ভূষিত করা হয়।
- ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য আমি ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাব পাই।
- ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমাকে ‘হিলাল-ই-জুরাত’ এবং ‘সিতারা-ই-পাকিস্তান’ পদকে ভূষিত করা হয়। (আমি দুই বার ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাবে ভূষিত হওয়ার দুর্লভ সম্মানের অধিকারী হয়েছি।)
গ. পদক :
আমার বুকে ২৪টি পদক শোভা পেয়েছে (সেনাবাহিনীতে আমার চেয়ে বেশি পদক আর কেউ পান নি)
৮. আমার ব্যর্থতা এটাই যে, আমি ভাগ্যান্বেষী, তোষামোদকারী, স্বার্থপর, উচ্চাভিলাষী ও ষড়যন্ত্রকারী চক্রের কোনো অংশীদার হতে পারি নি। যা সত্য তাই বলেছি আমি এবং সত্য কথা বলতে কখনো দ্বিধা করি নি। আমি ক্ষমতার রাজনীতি এবং সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখাকে ঘৃণা করেছি।
আমি আমার সিনিয়র ও জুনিয়র উভয়ের প্রতি ছিলাম অনুগত। আমি এ কথা বিনা দ্বিধায় বলতে পারি যে, অন্য যে-কোনো লোকের চেয়ে আমার দেশ ও দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কল্যাণে বেশি কাজ করেছি আমি।
৯. অফিসার ও জিসিও উভয়কে আমি কমিশন প্রদানের ক্ষমতা রেখেছি। এ ধরনের ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়কও ভোগ করেন নি। আমি ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পর্যন্ত বীরত্বপূর্ণ খেতাব প্রদান করতে পারতাম। কাউকে পদক প্রদানের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন সরকার প্রধান।
কিন্তু আমাকে এ বিরল ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এটা ছিল আমার প্রতি সরকারের আস্থার নিদর্শন। আমার ওপর সরকারের এ বিশ্বাস ছিল যে, কাউকে পদক প্রদানের ক্ষেত্রে আমার বিবেচনা হবে সন্দেহের অতীত। এ ধরনের ক্ষমতা আর কোনো কমান্ডিং জেনারেল ভোগ করেছেন কি-না তা আমার জানা নেই।
১০. জনাব, আত্মসমর্পণের নির্দেশ পেয়ে (১৩ই ডিসেম্বর ১৯৭১ আমি আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাই, তবে আমি আত্মসমর্পণ দলিলে সই করি ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে) সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমি আমার দেশের আর্থিক সম্পদ রক্ষায় ঢাকার ব্যাংকগুলো থেকে নগদ অর্থ (বিদেশি মুদ্রাসহ) ও স্বর্ণ সরিয়ে ফেলি।
আমি তখন এসব অর্থ-কড়ি ও স্বর্ণ নিয়ে কোনো নিরপেক্ষ দেশে পালিয়ে গেলে সেখানে আমাকে বাধা কে দিতো? রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের নজির আধুনিক সমাজে কোনো বিরল ঘটনা নয়। আমি ইচ্ছে করলে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করতে পারতাম ।
অন্যান্য জেনারেলদের জীবন মানের তুলনায় আমি হতো দরিদ্র জীবন- যাপন করছি। আমি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর এবং ভারতে একজন যুদ্ধবন্দি হয়ে বসবাসের অসম্মান থেকেও রেহাই পেতে পারতাম। আমি কর্নেল মোহাম্মদ খানের তত্ত্বাবধানে সকল নোট জ্বালিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। করেছিলাম ।

১১. কিন্তু সংকটকালে চৌর্যবৃত্তি এবং সৈন্য ও জনগণকে ত্যাগ করা নিয়াজির ধর্ম নয়। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে পালিয়ে যাবার পরিবর্তে আমি আমার সৈন্যদের নিয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিই। পশ্চিম পাকিস্তানি ও বিহারিদের জীবন রক্ষায় সকল সম্পদ ব্যবহার করেছি। নয়তো তাদের হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলা হতো। আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ করে কলকাতায় পতিতালয়ে পাঠানো হতো।
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহী ও ভারতীয়রা যা করেছিল তারা তাই করতো এবং চূড়ান্তভাবে আমার সৈন্যদেরকে মুক্তিবাহিনীর করুণার ওপর ছেড়ে দিতে হতো। এক পর্যায়ে জেনারেল শ্যাম মানেকশ হুমকি দেন যে, আত্মসমর্পণ দলিল চূড়ান্ত না হলে এবং তাতে আমি স্বাক্ষর না দিলে তিনি মুক্তি বাহিনীকে লেলিয়ে দেবেন।
আমি তার হুমকিতে বেসামরিক লোকজনের নিরাপত্তার কথা ভেবে আত্মসমর্পণে রাজি হই। আমার সাথে আলোচনা করে জেনেভা কনভেনশন অনুসারে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুঃসময়ে আমি আমার প্রাণপ্রিয় সৈন্যদের পরিত্যাগ করি নি।
কিন্তু ইতিহাসে এমন প্রচুর নজির রয়েছে যেখানে দুঃসময়ে পৃথিবী খ্যাত। জেনারেলগণ তাদের সৈন্যদের পরিত্যাগ করেছেন। জামায় পরাজিত হয়ে মহাবীর হ্যানিবল তার সৈন্যদের ছেড়ে গিয়েছিলেন। ফরাসি বীর নেপোলিয়ন দুই বার তার সেনাদের পরিত্যাগ করেছিলেন। একবার মিসরে এবং আরেকবার রাশিয়ায়। ১৯৭১ সালের মার্চে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াকুব খান পদত্যাগ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানে তার সৈন্যদের ত্যাগ করেন।
১২. জনাব প্রেসিডেন্ট, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও সামরিক বিপর্যয়ের জন্য যারা দায়ী তাদের কারো কোনো ক্ষতি হয় নি। এখানেই ঘটনার শেষ নয়। তাদের প্রত্যেককে অবসর গ্রহণের পর লোভনীয় চাকরি দেওয়া হয়।
কিন্তু ৪০ বছরের চাকরি জীবনে আমার কষ্টার্জিত পেনশন থেকে আমাকে ও আমার পারিবারকে বঞ্চিত করার কোনো যুক্তিগত কারণ আমার বোধগম্য নয়। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করা এবং তাদেরকে রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানে বিপর্যয়ের জন্য আমাকে বলির পাঠা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শেষ দিন পর্যন্ত এ বিরাট ট্রাজেডিতে যে কয়জন শীর্ষ ব্যক্তি। জড়িত ছিলেন তাদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার একটি বর্ণনা নিচে দিচ্ছি এ
ক. জেনারেল ইয়াহিয়া খান :
দুটি পেনশন এবং বিদেশে সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা লাভ। এ নীতিনির্ধারক, চক্রান্তকারী ও ওয়াদা খেলাপকারীকে একজন বীরের সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
খ. জেনারেল আবদুল হামিদ :
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ডান হাত। কার্যত সি-ইন-সি’কে পেনশন মঞ্জুর করা হয় এবং সরকারি ব্যয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।
গ. লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা
প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার। তিনি যুদ্ধে কখনো একটি গুলির আওয়াজও শোনেন নি। ইয়াহিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন তিনি এবং তার বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে হাত মেলান। তাকে পূর্ণ পেনশন দেওয়া হয়।
ঘ. লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান :
তিনিও পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধে একটি গুলির আওয়াজ শোনেন নি। তথাপি তিনি আরোহণ করেন শীর্ষ পদে। তাকে পূর্ব পাকিস্তান গ্যারিসনের দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান। সব জেনারেলই পূর্ব পাকিস্তানে বদলি এড়িয়ে যান।
আমি ছিলাম সিনিয়রিটির তালিকায় বাদশ। এতো জুনিয়ার জেনারেল হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তান। গ্যারিসন কমান্ড করার জন্য আমাকেই নির্বাচন করা হয়। প্রেসিডেন্ট আমার চেয়ে সিনিয়র জেনারেলদের তৎপরতা ও দক্ষতা মূল্যায়ন করে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আমাকেই এ পদের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করেন।
পশ্চিম পাকিস্তানে সকল শর্তই ছিল আমাদের অনুকূলে। কিন্তু ডিভিশন ও কোর পরিচালনায় চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল গুল হাসানের ব্যর্থতায় পশ্চিম রণাঙ্গনে আমাদের বিপর্যয় ঘটে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে শক্তি বৃদ্ধি ও সাজ-সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য আমার কাছে সুচিন্তিতভাবে মিথ্যা বার্তা পাঠান। তিনি পেশাগতভাবে আমার পদাবনতি ঘটাতে চেয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন ঐসব লোকদের একজন যারা আমাকে পরাজিত দেখতে চেয়েছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ক্ষমাহীন ব্যর্থতা সত্ত্বেও তাকে সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিযুক্তি দেওয়া হয়। তবে জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে অপসারণ করেন। তিনি তাকে পূর্ণ পেনশন দিয়েছিলেন এবং তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিদেশে পাঠানো হয়।
৫. এয়ার চিফ মার্শাল রহিম :
১৯৭১ সালের যুদ্ধে বিমান বাহিনী পরিচালনায় তিনি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ও তার বিমান বাহিনী আত্মগোপন করে। এ সুযোগে ভারতীয় বিমান বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানের আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং পূর্ণ পেনশন পান। এ ছাড়া তাকে রাষ্ট্রদূতও করা হয় ।
চ. লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহানজেব আরবাব :
তার জিওসি তাকে পূর্ব পাকিস্তানে একটি ব্রিগেডের কমান্ড থেকে অপসারণ করেন এবং লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিচারের জন্য তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠান। তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তা সত্ত্বেও তিনি ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর জেনারেল এবং পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। অবসর নেওয়ার পর তিনি পূর্ণ পেনশন পান।
ছ. মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী :
১. ১৯৭১ সালের মার্চে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেনারেল ফরমান আলী। এ অভিযান এতো নিষ্ঠুর ও ভয়ঙ্কর ছিল যে, আওয়ামী লীগের সাথে আপোসের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় জাতিসংঘ প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্রেসিডেন্ট, আমার নিজের এবং গভর্নরের অনুমোদন ও সম্মতি ছাড়া জাতিসংঘ প্রতিনিধির কাছে একটি অতি গোপনীয় বার্তা হস্তান্তর করেন। তিনি আমাদের না জানিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান ও রুশদের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি তার ভাগিনার মাধ্যমে তার স্ত্রীর কাছে ৮০ হাজার টাকা (১৯৭১ সালে এটা অনেক টাকা) পাঠিয়েছিলেন। তার ভাগিনা ছিলেন হেলিকপ্টারের একজন পাইলট। এ ঘটনা জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। তাকে ফৌজি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান করা হয় এবং এরপর তিনি মন্ত্রীও হন। তিনি এখন প্রচুর অর্থের মালিক। যা দেখে অনেকেই ভ্রূ কুচকাচ্ছেন।
জ. মেজর জেনারেল তাজামুল হোসেন :
কোর্ট মার্শালে তার বিচার হয় এবং তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসলাম বেগের পরামর্শে তাকে মুক্তি দেওয়ার পর তার পেনশন পুনর্বহাল করা হয়।
ঝ. আরো দুই জন :
আরো দুই জন অফিসারের পেনশন পুনর্বহালের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। সেগুলো হচ্ছে:
১. কর্নেল খানজাদা
তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার শাস্তি হয়, কিন্তু ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান তার পেনশন মঞ্জুর করেন।
২. মেজর জেনারেল আকবর খান
১৯৫১ সালে রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু তার পেনশন মঞ্জুর করা হয়। ১৯৭২ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো তাকে মন্ত্রী। নিযুক্ত করেন।
১৩. উপরোক্ত উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অফিসারদের পেনশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া ছাড়াই আমি পেনশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
১৪. যাদের সিদ্ধান্তে আমার অনশন বন্ধ হয়েছে এবং যার জন্য আমি ও আমার সন্তানরা কষ্ট ভোগ করেছি তার কিছুটা বিবরণ আপনার কাছে পেশ করেছি। সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবিধান করার সর্বোচ্চ ক্ষমতা আপনার রয়েছে।
ন্যায়বিচারের মূল স্তম্ভ হচ্ছে যে, ‘আপনি একজনকে যে সুবিধা দেবেন, অন্যান্যদের একই সুবিধা দিতে হবে। এটা হচ্ছে সাম্যের বিধান এবং এর কোনো ব্যতিক্রম কাম্য নয়। প্রত্যেকের জন্য বিচারের একই মানদণ্ড থাকতে হবে।
আইন মন্ত্রণালয় অথবা পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির কাছে বিষয়টি পাঠানো হলে তারা সাম্যের আইনকে অগ্রাহ্য করবেন না। ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ন্যায়বিচারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ইসলাম মজলুম মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এক জনাই বিশ্বে ইসলামের প্রসার ঘটেছে।
১৫. আমি কি এ কারণে দুর্ভোগ পোহাব যে, আমি কেন্দ্র থেকে এক হাজার মাইল দূরে বিচ্ছিন্ন একটি রণাঙ্গনে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছি যেখানে সামরিক বিবেচনার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে? যেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগে পূর্ব পাকিস্তান পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?
পূর্ব পাকিস্তান সংকটের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত প্রত্যেকে যেখানে হয় পুরোপুরি পুনর্বাসিত নয়তো পেনশন অথবা গুরুত্বপূর্ণ চাকরি পেয়েছে?
১৬. জনাব প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানের শেষ কমান্ডারকে কি বাকি জীবন দৈন্যের মধ্যে কাটাতে হবে এবং তার সন্তান-সন্ততিকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে এবং তারা কি বসবাসের অযোগ্য গৃহে বসবাস করবে? নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্য কি এ জেনারেল ও তার পরিবারকে শাস্তি দেওয়া হবে :
ক. যেখানে ইতোমধ্যেই দুই জন জেনারেল ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং সেনাবাহিনীর হাল ধরার জন্য কেউ ছিল না সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব গ্রহণ? খ. সামরিক অভিযান ও বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা যেখানে পশ্চিম ব্রিগেডকে ২১ দিন ঠেকিয়ে রেখেছিল।
তরুণ ক্যাপ্টেন আহসান মালিকের চৌকিতে ছিল ৭৫ জনের একটি কোম্পানি। ৭৫ জনের মধ্যে ছিল ৩৯ জন নিয়মিত সৈন্য এবং বাদবাকি ৪৫ জন মুজাহিদ। অন্যদিকে ভারতের ৩ হাজার সৈন্যের সেই ব্রিগেডে ছিল ১৮টি ফিল্ড গান ও ১৮টি মর্টার। প্রতিদিন অন্তত দুবার শত্রু বিমান ক্যাপ্টেন মালিকের চৌকিতে বোমাবর্ষণ করেছে। তাতেও পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের অবস্থান ধরে রাখে।
খ. হিলিতে একটি পাকিস্তানি ব্যাটালিয়ন (৯০০ সৈন্য) ভারতের একটি। পদাতিক ডিভিশন ও একটি ট্যাংক ব্রিগেডকে (৩ রেজিমেন্ট ট্যাংক) ২০ দিন প্রতিরোধ করেছিল। ভারতের এ পদাতিক ডিভিশনে ছিল ৫ ব্রিগেড (১৫ ব্যাটালিয়ন) সৈন্য। এ ব্যাটালিয়নকে ৪০ মাইল দূরে বগুড়ায় কিছু হটার নির্দেশ দেওয়া হয়। যথারীতি নিরাপদে তারা পিছু হটে আসে। হিলিতেও দিনে দুই বার বিমান হামলা হতো।
গ. বগুড়ায় ট্যাংক রেজিমেন্টের দফাদার সারোয়ার আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান এবং তার একটি মাত্র ট্যাংক নিয়ে গোলাবর্ষণ করতে করতে ভারতের অবস্থানের ভেতর ঢুকে পড়েন। তার ট্যাংক ধ্বংস হয়ে গেলে তিনি বেরিয়ে আসেন এবং ব্যক্তিগত অস্ত্র নিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। খণ্ড-বিখণ্ড হওয়া নাগাদ তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। ভারতীয় সৈন্যরা দিক পরিবর্তনে বাধ্য হয় এবং দফাদার সারোয়ারকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়।
ঘ. আমাদের আরেকজন সৈন্যকে ভারতীয়রা সামরিক মর্যাদার দাফন করে। তার সাহসিকতায় শত্রুরাও অভিভূত হয়ে পড়েছিল। বছরের পর বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়। লাখ লাখ সৈন্য এতে অংশ নেয়। কিন্তু এ যুদ্ধে মাত্র একজন সৈন্য শত্রুর হাতে সামরিক মর্যাদায় সমাহিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল। এ ভাগ্যবান ব্যক্তি ছিলেন একজন ব্রিটিশ সার্জেন্ট।
তিনি ওয়েস্টার্ন ডেজার্টে জার্মান সৈন্যাধ্যক্ষ ফিল্ড মার্শাল রোমেলকে হত্যা করতে গিয়ে নিহত হন। আমি মাত্র ৪৫ হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করেছি এবং ভারতের সাথে ২৬ দিন প্রকাশ্য যুদ্ধ হয়। এ সময়ে ভারতীয়রা আমাদের ৪ জন বীর যোদ্ধাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করে।
২০. সাহস, দক্ষতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার এমন উদাহরণ আর কাছে কিনা সন্দেহ। যে সৈন্যরা এমন প্রবাদ প্রতিম বীরত্ব প্রদর্শন করেছে এবং শত্রুর হাতে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন সেখানে চরম প্রতিকূলতার ভেতর পূর্ব পাকিস্তানে এগারো মাস পাকিস্তানের পতাকা উড্ডীন রাখা।
গ. হাজার হাজার পশ্চিম পাকিস্তানি এবং লাখ লাখ বিহারিকে গণহত্যার মুখে ঠেলে না দেওয়া এবং হাজার হাজার নারীদের ধর্ষিতা ও পতিতালয়ে বিক্রি হতে না দেওয়া এবং সৈন্যদেরকে নেতৃত্ব দানের জন্য আত্মসমর্পণের পর কমান্ড পরিত্যাগ না করা।
ঘ. যেখানে আমি খুব সহজে পালাতে পারতাম সেখানে পালিয়ে না গিয়ে আত্মসমপর্ণ দলিলে স্বাক্ষরের গ্লানি বহন এবং ভারতে যুদ্ধবন্দি শিবিরে। বিড়ম্বিত জীবন-যাপন।
ঙ. সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্ত অফিসার হওয়ায়। চ. নিরপেক্ষ আইন থেকে বঞ্চিত হওয়ায়।
ছ. বছরের পর বছর শোষণ বঞ্চনা থেকে উত্থিত একটি রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পরিণতি হিসেবে সামরিক বিপর্যয়। (নিয়াজি একজন কাপুরুষ এবং অনেকের কৃতদোষে ফলভোগী ব্যক্তি)।
১৭. একজন সৈনিকের জন্য এটাই সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার যে তার সিইনসি বার্ষিক প্রতিবেদনে তার যুদ্ধক্ষেত্রে কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন ।
১৮. জনাব প্রেসিডেন্ট, কারো প্রতি বিদ্বেষ থেকে আমি আপনার কাছে এ আবেদন করি নি। আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তা স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যে কারো কারো নাম উল্লেখ করতে হয়েছে। আমি ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমার প্রতি দুই দশকের বেশি অন্যায় করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে আমি ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে অবসর দিয়ে এবং পূর্ব থেকে কার্যকর পেনশন মঞ্জুর করলেই আমার প্রতি এ যাবৎ যে অন্যায় করা হয়েছে তার পরিসমাপ্তি ঘটবে। আপনি আমার প্রতি এতোটুকু সুবিচার করলে আমি
আপনার কাছে চির-কৃতজ্ঞ থাকবো। ১৯. আমার সৈন্যরা যেখানে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার ভেতর বীরত্বের সাথে লড়াই করছিল সেখানে আমি তার চেয়ে ভালো নেতৃত্ব কীভাবে দিতে পারতাম। সকল পর্যায়ের কমান্ডে চমৎকার নেতৃত্ব থাকার কারণেই কেবল তা সম্ভব হয়েছে। এখানে আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি :
ক. কামালপুর চৌকিতে আমাদের এক তরুণ কাপ্টেন ভারতের একটি সামরিক মর্যাদায় সমাহিত হওয়ার দুর্লভ গৌরব অর্জন করেছে, তাদের বর্ণনৈপুণ্য ও আত্মত্যাগের পেছনে কি তাদের কমান্ডারের কোনো অবদান নেই।
২১. পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার হিসেবে আমার সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলে আমার প্রতি শেষ অবিচারের অবসান ঘটবে। অন্যদের ভুল ও পাপের প্রায়শ্চিত্ত থেকে আমি মুক্তি চাই ।
আপনার একান্ত অনুগত,
লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.)
এএকে নিয়াজি
১. শামি রোড, লাহোর ক্যান্টনমেন্ট তারিখ : ২৩শে এপ্রিল, ১৯৯৫
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের পছন্দ না হলে, উপরোক্ত পত্রের উত্তর দেওয়ার
প্রয়োজন নেই।
আরও দেখুন: