[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৯৪৭-১৯৭১ সূচিপত্র

পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৯৪৭-১৯৭১ । নিরাপত্তা বরাবরই আমার আগ্রহের জায়গা। বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা খ্যাত ৬ দফা অধ্যয়নকালে ৬ দফার ৬ নম্বর দফা নিয়ে আমার কৌতুহল ছিল অন্য দফাগুলো থেকে একটু বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বেড়ে ওঠায় প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগের সাথে নিত্য পরিচয় ঘটে। দুর্যোগ নিয়ে যখন একাডেমিক পড়াশোনা শুরু করি তখন ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কথা সামনে আসে।

যে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপদ্রুত এলাকায় বহুল প্রতীক্ষিত ১৯৭০ এর নির্বাচন পিছিয়ে যায়। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা অতীতের সকল দুর্যোগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এই গবেষণাকর্মের প্রতিটা পর্যায়ে যার দিক নির্দেশনা, উপদেশ ও উৎসাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে তিনি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল।

পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৯৪৭-১৯৭১ সূচিপত্র

 

পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৯৪৭-১৯৭১ সূচিপত্র

 

প্রথম অধ্যায়: ভূমিকা

  • পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভূমিকা

দ্বিতীয় অধ্যায়: পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা

  • নিরাপত্তা কী
  • নিরাপত্তার প্রচলিত ধারণা ও প্রচলিত নিরাপত্তা কাঠামোয় পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্য
  • পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে বাঙালিদের উপস্থিতি
  • নিরাপত্তার অপ্রচলিত ধারণা

তৃতীয় অধ্যায়: ১৯৬৫’র পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব বাংলার নিরাপত্তাহীনতা ও যুদ্ধে বাঙালির ভূমিকা ৩.১ যুদ্ধের পটভূমি

  • যুদ্ধে বাঙালির ভূমিকা
  • যুদ্ধ চলাকালে পূর্ব বাংলার নিরাপত্তাহীনতা
  • পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলায় যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া
  • পাক- ভারত যুদ্ধে বহিঃর্বিশ্বের প্রতিক্রিয়
  • পাক-ভারত যুদ্ধ ও ৬ দফা

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

চতুর্থ অধ্যায়: ৬ ও ১১ দফা এবং সত্তরের নির্বাচন ও জলোচ্ছ্বাস: নিরাপত্তাহীনতার প্রতিফলন

  • দফার পটভূমি
  • দফার দফা সমূহ ৪.৩ ৬ দফায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু
  • দফাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় সমূহ
  • সত্তরের জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতা
  • জলোচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তা সংকট
  • জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা
  • জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা
  • জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহতায় ভাসানীর উদ্বেগ: শামসুর রাহমানের কবিতা ‘সফেদ পাঞ্জাবি’
  • ১৯৭০ এর সাইক্লোন জলোচ্ছ্বাস: সাধারণ নির্বাচনে এর প্রভাব

পঞ্চম অধ্যায়: ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

  • মুক্তিযুদ্ধকালীন অপ্রচলিত নিরাপত্তা ইস্যুসমূহ
  • মুক্তিযুদ্ধকালীন নিরাপত্তা সংকটে দেশবাসী
  • শরনার্থীদের নিরাপত্তা
  • মুক্তিযুদ্ধকালে চিকিৎসা ব্যবস্থা: শরনার্থীদের ‘জয়বাংলা’ রোগ
  • প্রতিরক্ষায় সাধারণ মানুষের ভূমিকা

 

পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় পূর্ব বাংলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ১৯৪৭-১৯৭১ সূচিপত্র

 

ষষ্ঠ অধ্যায়: উপসংহার

১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান স্বাধীন হবার পর থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অধীনে থাকে। ভৌগোলিকভাবে হাজার মাইল দূরত্বে অবস্থান করেও পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক নানামুখী বৈষম ও বঞ্চনা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোতে দীর্ঘ এই সময় পূর্ব বাংলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বঞ্চনা যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ছিল, তেমনি ছিল নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে।

নিরাপত্তার প্রচলিত কাঠামোগত যে দিক সেখানেও পূর্ব বাংলাকে নায্য হিস্যা দেওয়া হয় নি। পূর্ব বাংলার মানুষকে যেমন তারা নিম্ন শ্রেণীর মনে করেছে, তেমনি বাঙালিরা ‘মার্শাল রেইস’ না এই অপব্যাখ্যা দিয়ে বাঙালিদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীতে অন্তর্ভূক্তিতে অনীহা দেখিয়েছে।

পাকিস্তানের নীতি নির্ধারকরা এমনও মনে করছে যে, সেনাবাহিনীর জন্য যে শারীরিক চাহিদা প্রয়োজন তা পূরণে বাঙালিদের সামর্থ নেই এবং সাহসের দিক থেকে বাঙালিরা কাপুরুষের সামিল। জাতি হিসাবে বাঙালিকে এভাবে বিবেচনা করা লজ্জা ও হীনমন্যতার কারণ ছিল। অথচ বাঙালিদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য প্রস্তুত করে নেয়ার দায়িত্বও তাদের ছিল।

তা না করে অবিবেচনা প্রসূত ধারণা নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অবকাঠামোগত সুবিধা না দিয়ে কয়েকটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তারা সে ক্ষতি যেন পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলা যে পিছিয়ে ছিল এ ব্যাপারে বাঙালিদের যে অভাব-অভিযোগ ছিল সেটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। যার ফলশ্রুতিতে দেখা যায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালিদের কোটা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়।

প্রথাগত বা প্রচলিত নিরাপত্তা ক্ষেত্রগুলোতে দুই প্রদেশের মধ্যে আকাশ সমান বৈষম্য ছিল। বৈষম্যের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও ছিল আঁতকে ওঠার মত। নিরাপত্তার অপ্রচলিত যে দিক সেখানেও পাহাড় সমান বৈষম্য বিরাজ করত।

খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গে জানা যায় যে, দেশভাগের পরই ১৯৫১ সালে খাদ্য ঘাটতির কারণে খুলনা, যশোর, ফরিদপুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। যে দুর্ভিক্ষাবস্থা এ অঞ্চলের বাইরে এসে ময়মনসিংহ, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ আরও অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। খাদ্য সংকট এতই তীব্র হয় যে, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অনশনব্রত পালন করেন।

১৯৪৭এ দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলা বঞ্চিত হয়েছে তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সকল অধিকার। ১৯৭১ সালে এই বঞ্চনার তীব্র বহিঃপ্রকাশ পরিলক্ষিত হয়। তবে ১৯৭১ এ সকল বঞ্চনাকে পাশ কাটিয়ে নিরাপত্তা ইস্যু সামনে চলে আসে। যুদ্ধকালে অর্থনীতি যেমন বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে, তেমনি ফসল চাষ করতে না পারার কারণে খাদ্যাভাবে অনেক জেলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

নিরাপত্তার অভাবে ব্যবসায়ী মুটে, দিন-মজুর কেউ তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করতে না পারার মাত্রাতিরিক্ত কষ্টে দিনযাপন করে। একদিকে যেমন ছিল খাদ্যের অভাব, অন্যদিকে অভাব নিরাপত্তার। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি আরও তীব্র হয়। যুদ্ধকালে হিন্দু জনগোষ্ঠী সবথেকে বেশি নিরাপত্তা সংকটে পড়ে। রাজাকার ও পিস কমিটির টার্গেটে পরিণত হয় তারা। হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংকট ছিল বেশ তীব্র। তারা জীবন বাঁচানোর লক্ষে বাপ-দাদার ভিটা ভাগ করে ভারতের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য আশ্রয় নেয়।

ভারত যাবার পথে স্থানীয় দস্যু, ডাকাত, রাজাকারদের কাছে সম্ভ্রম হারানো থেকে শুরু করে জীবন ও সম্পদ হারানোর জন্য ছিল। আবার জীবনের মায়া ত্যাগ করে সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে গেলেও সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য সংকট ছিল। কলেরা, ডায়রিয়া, আমাশয় ও চোখ ওঠা রোগ (জয় বাংলারোগ) মহামারী আকার ধারণ করে শরনার্থীদের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত ও নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অবদানও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একজন গৃহবধূ যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাইয়েছে, তেমনি একজন কৃষক, মুদি দোকানি, অবুঝ শিশু ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাজকে সহজ করতে ভূমিকা রেখেছে।

পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোয় ২৪ বছর পূর্ব বাংলার অধিবাসীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুভাবেই নিরাপত্তা সংকটে কাটিয়েছে। যুদ্ধকালে সেই সংকট জনজীবনকে করেছে বিপর্যন্ত। যুদ্ধের পূর্বের বছর যে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় হয় সেখানে ও বরাবরের মত উপেক্ষা প্রদর্শন করে পাকিস্তান সরকার। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী নির্বাচনে তাই পাকিস্তানীদের নিকট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় পূর্ব বাংলার জনগণ।

পূর্ব বাংলার মানুষকে অস্ত্রের মাধ্যমে থামিয়ে নেওয়ার যে কৌশল ইয়াহিয়া সরকার গ্রহণ করে তার জবাবে নিরাপত্তা সংকটে থাকা পূর্ব বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধুর ‘যার যা আছে’- শ্লোগানে উদ্দীপ্ত হয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরে অবশেষ দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের। বিজয় অর্জনে বাঙালি ফিরে পায় তার নিরাপত্তা সহ সকল অধিকার।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment