আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এ রকম একটা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দানে অফিসার ট্রেনিং স্কুল খোলা হয়। অফিসার ট্রেনিং স্কুল থেকে বের হওয়া কর্মকর্তাদের ইসিও’ (ইমার্জেন্সি কমিশন্ড অফিসার্স) বলা হতো।
আমি বাঙালোর অফিসার ট্রেনিং স্কুল থেকে বের হই ১৯৪২ সালের ৮ই মার্চ এবং নিয়োগ পাই রাজপুত রেজিমেন্টে, যার ট্রেনিং সেন্টার ছিল ফতেহগড়ে। বাঙালোরে প্রশিক্ষণকালে আমাকে মেজর ব্লেয়ারের অধীনে একাদশ কোম্পানির ক্যাডেট কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৪৫ সালের আগস্টে যুদ্ধ থেমে গেলে সব ইসিও-কে সিলেকশন বোর্ডে উপস্থিত থাকতে বলা হয় এবং যারা অনুমতি পায় তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রেগুলার অফিসার হয়। এদেরকে এরপর থেকে বলা হতো ‘আইসিও’ (ইন্ডিয়ান কমিশন্ড অফিসার্স)। আমি সিঙ্গাপুরে সিলেকশন বোর্ডে হাজির হই। আমি যথা সময়ে অনুমতি পাই এবং আইসিও ৯০৬ হই।
ট্রেনিং সেন্টার থেকে লেফটেন্যান্ট প্যাডাক ও আমি ওয়েস্টার্ন ডেসার্টে ৪/৭ রাজপুত ফাইটিংয়ে যোগ দিই। ১৯৪২ সালের ৩০শে অক্টোবর আমরা মিসরের উদ্দেশ্যে ভারতের বোম্বাই থেকে জাহাজে চড়ি। জাহাজ থেকে পোর্ট ইসমাইলিয়ায় নামার পর আমাদেরকে নেওয়া হয় মিনা ক্যাম্পে।
ওটা কায়রোর উপকণ্ঠে পিরামিডগুলোর কাছে। আমাদের নিজ নিজ ইউনিটে পাঠানোর আগে অফিসার ও জওয়ানদের ব্যাপক অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং শত্রুর অস্ত্রশস্ত্র ও মরুভূমির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়।
আমাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয় মহড়ার মাধ্যমে। এ মহড়ায় কামান, মর্টার ও মেশিনগান থেকে তাজাগুলি ছোঁড়া হয়। মহড়ায় আমি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে আক্রমণকারী কোম্পানির নেতৃত্ব প্রদান করি। আমার দক্ষতা ও গভীর আগ্রহ দেখে সিনিয়র অফিসাররা এতো খুশি হন যে, আমাকে মিনা ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবার প্রস্তাব দেন।

কিন্তু আমি ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি এবং ব্যাটালিয়নে যোগদানের ইচ্ছে প্রকাশ করি।আমাকে ৪/৭ রাজপুত রেজিমেন্টের ইনটেলিজেন্স অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় । আমাদের ব্যাটালিয়ন ছিল ব্রিগেডিয়ার হিউজের নেতৃত্বাধীন ১৬১ ব্রিগেডের অংশ। মেজর জেনারেল ব্রিগস ছিলেন পঞ্চম ভারতীয় ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং।
আমি যুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করি যা পরবর্তীতে ভারত, বার্মা (মায়ানমার), মালয়, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় শত্রুর সাথে লড়াইয়ে ‘অত্যন্ত কার্যকর’ বলে প্রমাণিত হয়। পঞ্চম ভারতীয় ডিভিশনকে শীঘ্রই ইরাকে পাঠানো হয় এবং এটা পারস্য-ইরাক ফোর্সের অংশে পরিণত হয়। ইরাকে সৈন্য সংগ্রহ করা হয় ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ইন্দো- ইউরোপীয় অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ইরান ও ইরাকে জার্মান আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আমরা চলে যাই ফতেহগড়ে, আমাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ফতেহগড় থেকে আমরা যাই চাস-এ। এটা বিহারের রাঁচির কাছে একটা ছোট্ট শহর, যেখানে আমাদের ডিভিশনকে জড়ো করা হয় বার্মার (মায়ানমার) উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে জঙ্গল প্রশিক্ষণের জন্য।
প্রশিক্ষণ এলাকা থেকে ১৬১ ব্রিগেডকে বাংলার টেকনাফ উপদ্বীপে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেটা বার্মা (মায়ানমার) সীমান্তের খুব কাছে। আমাদের ব্যাটালিয়ন অবস্থান করে নিহলায়। এখানে আমরা ব্যাপক জঙ্গলযুদ্ধ প্রশিক্ষণ শুরু করি।
আমাদের ব্রিগেডকে প্রথমে নির্দেশ দেওয়া হয় বার্মার আরাকানে রাজালিন দুর্গ দখলের, যা আমরা সাফল্যের সাথে শেষ করি। যদিও আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়, তবু আমরা মরুভূমি এবং জঙ্গল যুদ্ধের পার্থক্য বুঝতে পারি সম্যকভাবে।
আরও দেখুন: