[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।

ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর

 

ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর

 

ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর

ভারতের তুরা থেকে আগত রাস্তাটিই হচ্ছে ঢাকা পৌঁছার সংক্ষিপ্ততম রুট। শস্যক্ষেত ও মাঠের মধ্য দিয়ে এ রাস্তাটি এসেছে। কোথাও বড়ো ধরনের কোনো বাধা-বিঘ্ন ছিল না। তবে মধুপুর বন ও টাঙ্গাইলে আমাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী । এরা ভারতীয়দের ঢাকার দিকে অগ্রাভিযানে সহায়তা দিতে পারতো।

আমি নিজে জগজিৎ সিং অরোরার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কেন তিনি এ এলাকায় ১০১ কমিউনিকেশন জোনের নেতৃত্বে মাত্র দুটি নিয়মিত পদাতিক ব্রিগেড এই একটি মুক্তিবাহিনী ব্রিগেড পাঠিয়েছিলেন। ঢাকা দখলের মূল লক্ষ্য অর্জনে এ এলাকায় সাঁজোয়া ও পদাতিক বাহিনীর এটি সম্মিলিত সমাবেশ ঘটানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভারতের অদক্ষ নেতৃত্ব ছিল অতি মাত্রায় সতর্ক এবং কামালপুর পর্যন্ত দখল করতে পারে নি।

কামালপুরে আমাদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি কোম্পানিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তারা এখানে একটি নিয়মিত ব্রিগেড এবং মুক্তিবাহিনীর আরো একটি ব্রিগেড নিয়োগ করে। এতেও তারা কুলিয়ে উঠতে পারে নি। ২১ দিন পর আমি কামালপুর পোস্টে আমার কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেই।

আমি আজো বুঝতে পারছি না, জগজিৎ সিং অরোরা কেন এ সেক্টরের গুরুত্বকে খাটো করে দেখেছেন। এখানে বিরাট সামরিক অপারেশন শুরু করলে তিনি সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ততম সময়ে ঢাকার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারতেন এবং এ পরিস্থিতিতে আমাকে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হতো।

টাঙ্গাইলে ভারতীয় ছত্রীসেনাদের অবতরণ ব্যর্থ হয়। কারণ সময়টা ছিল ভুল। ভারতীয় ছত্রী সৈন্যরা ময়মনসিংহ এলাকা থেকে আমাদের সৈন্য প্রত্যাহারে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা বলেছেন।

যে, তিনি টাঙ্গাইলে এক ব্যাটালিয়ন ছত্রীসেনা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হয় নি। ভারতীয় সৈন্যরা তাদের অবতরণ স্থলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং তারা ঢাকা অভিমুখী তাদের নিজেদের বাহিনীকে কোনো সহায়তা দিতে পারে নি। একইভাবে, মেঘনা নদীর এপারে ভারতের হেলিকপ্টারে সৈন্য প্রেরণও লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।

হেলিকপ্টারবাহিত ভারতের চতুর্থ কোরের সৈন্যরা সাদুল্লাহর ব্রিগেডকে আস্তগঞ্জ থেকে ভৈরব বাজারে পিছু হটে আসতে বাধা দিতে পারে নি। নাগরার সৈন্যরা টাঙ্গাইলের কাছে আটকা পড়ে। কারণ, তাদের কোনো পরিবহন ছিল। না।

সমন্বয় ও দূরদর্শিতার অভাবে এসব ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন বহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা এবং শত্রু বহরের অগ্রযাত্রায় বাধা দানের জন্য ছত্রীসেনা ব্যবহার করা হয়। জগজিৎ সিং অরোরা ছত্রীসেনা ব্যবহার করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন নি

ভারতীয় অপপ্রচার এবং আমাকে আত্মসম্পণের নির্দেশদানকারী ষড়যন্ত্রকারীদের কল্যাণে ভারতীয়রা বিজয়ী হতে পেরেছে। কিন্তু কোনো সামরিক বিশেষজ্ঞই বলতেন না যে, ভারত বিজয়ী হয়েছে। মোকাবেলা করলে এবং রংপুর-দিনাজপুর এড়িয়ে গেলে তিনি হিলি এলাকার উত্তরে অগ্রগতি অর্জন করতে পারতেন। তবে অনেক পরে তিনি সে চেষ্টা করেছিলেন।

জগজিৎ সিং অরোরা হিলি থেকে সিরাজগঞ্জ ঘাট এবং এখান থেকে ফেরি দিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে তিনি ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে পারতেন। একইভাবে তিনি তুরা-ময়মনসিংহ সেক্টরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ট্যাংক এবং কয়েক ডিভিশন পদাতিক সৈন্যের সাহায্যে আমাদের অবস্থানের পতন ঘটিয়ে অথবা এড়িয়ে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারতেন। তিনি কামালপুরে আমাদের একটি মিশ্র কোম্পানির বিরুদ্ধে দুটি ব্রিগেড, আরেকটি ট্যাংক ব্রিগেড ও কোর আর্টিলারি মোতায়েন করেন।

এই হিসাব থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, পূর্ব পাকিস্তান দখলে জগজিৎ সিং অরোরার অন্তত কয়েক মাস লেগে যেত। আমাদের সৈন্যরা ভারতীয় সৈন্যদের তিন সপ্তাহ সীমান্তে আটকে রাখে এবং পরে তাদেরকে প্ররোচিত করে আমাদের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এ পরিস্থিতিতে জগজিৎ সিং অরোরা পূর্ব পাকিস্তান দখলের চিন্তাও করতে পারেন নি।

অন্যদিকে, আমরা প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেছিলাম। ৫ই ডিসেম্বর আমাদেরকে ভারতীয় সৈন্যদের পূর্ব রণাঙ্গন থেকে পশ্চিম রণাঙ্গনে অপসারণের সুযোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা এ নির্দেশ পালনে সফল হয়েছি।

সত্যি, ভারত পূর্ব রণাঙ্গন থেকে একটি ইউনিটও পশ্চিম রণাঙ্গনে স্থানান্তর করতে পারে নি। পূর্ব পাকিস্তানের লড়াই পশ্চিম পাকিস্তানে করা হবে বলে যে পরিকল্পনা ছিল, পশ্চিম পাকস্তিানের সেনাবাহিনী সে লড়াই করতে পারে নি।

তাদের ব্যর্থতার জন্যই আমাদের বিপর্যয় ঘটে। অথচ লড়াইয়ে জেতার মতো তাদের পর্যাপ্ত সৈন্য, বিপুল সম্পদ ও উদ্যোগ ছিল। আমরা পূর্ব রণাঙ্গনে ১২তম ডিভিশন ভারতীয় সৈন্যকে আটকে রেখে পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলাম।

ঢাকা দখল করতে হলে ভারতীয়দেরকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হতো এবং আমার বাহিনীকে ধ্বংস করতে হলে তাদের প্রচুর প্রাণহানি ঘটতো। কিন্তু তাদের ভাগ্য ভালো যে, আমার হাই কমান্ডের ভুলের কারণে তাদের সামরিক বিপর্যয় একটি বিজয়ে পরিণত হয়েছে। আমাকে শুধু সাংকেতিক ভাষায় বলা হয়, ‘থামো নীল, লাল জয়ী হয়েছে।

জগজিৎ সিং অরোরাসহ তার কমান্ডের অধিকাংশ জেনারেলকে পদোন্নতির জন্য অযোগ্য বিবেচনা করা হয় এবং সেনাবাহিনীতেও তাদের রাখা হয় নি। এতেই প্রমাণিত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনী বিজয়ী হতে পারে নি।

বিজয়ী হলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা হতেন ভারতের পরবর্তী সি-ইন-সি অথবা শো-পিস হিসেবে হলেও তাকে সেনাবাহিনীতে রাখা হতো।

পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধকে ভারতীয়রা ‘বজ্র অভিযান’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু কোথাও এ যুদ্ধের গতি বজ্রের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে নি। বরং এ যুদ্ধের গতি ছিল শম্বুক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা দ্রুতগতিতে ডানকার্ক দখলের জন্য যে অভিযান চালায় তার ছদ্মনাম ছিল ব্রজ অভিযান।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

জগজিৎ সিং অরোরা জার্মানদের এ অভিযান পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে সেভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারতেন। কিন্তু তার পরিকল্পনা ছিল সেকেলে ও গতানুগতিক।

জার্মানরা তাদের আক্রমণাত্মক অভিযানের নাম দিয়েছিল রিসক্রিপ (ঝটিকা হামলা)। ঝড়ের গতিতে এবং তীব্র বেগে হামলা চালিয়ে শত্রুর অবস্থানকে তছনছ করে দেওয়ার জন্যই এ ধরনের নামকরণ করা হয়। জার্মানরা আদেনিজ দখলের জন্য তাদের সৈন্য সমাবেশ করে এবং এতো দ্রুতগতিতে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে যায় যে শত্রুরা প্রতিরোধেরও সময় পায় নি এবং তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

অন্তত দুটি সেক্টরে এবং দুটি অক্ষে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবার মতো পর্যাপ্ত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান জগজিৎ সিং অরোরার ছিল।সেখানে ভূমি ছিল যানবাহন চলাচলের জন্য খুবই উপযোগী। তার গতি বাড়ানোর জন্য স্থানীয় সহায়তাও ছিল।

সম্পদের অভাব অথবা ভূমির প্রতিকূলতার জন্য নয়, বরং দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং ভ্রাম্যমান যুদ্ধের অনভিজ্ঞতা, দক্ষ ফিল্ড কমান্ডারের ঘাটতি এবং সর্বোপরি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র ও সংগঠিত প্রতিরোধের কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের রণাঙ্গনে জগজিৎ সিং অরোরার পা মাটিতে সেঁধিয়ে যায়।

জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার পরিকল্পনায় ব্লিৎসক্রিগের কোনো উপকরণ ছিল না। তিনি তার সৈন্যদের কেন্দ্রীভূত করার পরির্তে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ছড়িয়ে দেন। তিনি রংপুর-হিলি এবং তুরা-ময়মনসিংহ সেৱৱে তার সব ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান কেন্দ্রীভূত করলে সুফল পেতে পারতেন। এ দুটি সেক্টরে মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিবর্তে তার ট্যাংক হামলা চালানো উচিত ছিল।

৬ ডিভিশনের পুরো শক্তিকে ব্যবহারের পরিবর্তে সর্বনিম্ন শক্তিতে তিনি আমাদের মোকাবেলা করলে এবং রংপুর-দিনাজপুর এড়িয়ে গেলে তিনি হিলি এলাকার উত্তরে অগ্রগতি অর্জন করতে পারতেন। তবে অনেক পরে তিনি সে চেষ্টা করেছিলেন।

জগজিৎ সিং অরোরা হিলি থেকে সিরাজগঞ্জ ঘাট এবং এখান থেকে ফেরি দিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে তিনি ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে পারতেন। একইভাবে তিনি তুরা-ময়মনসিংহ সেক্টরে সর্বোচ্চ সংখ্যক ট্যাংক এবং কয়েক ডিভিশন পদাতিক সৈন্যের সাহায্যে আমাদের অবস্থানের পতন ঘটিয়ে অথবা এড়িয়ে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার প্রতি হুমকি সৃষ্টি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারতেন। তিনি কামালপুরে আমাদের একটি মিশ্র কোম্পানির বিরুদ্ধে দুটি ব্রিগেড, আরেকটি ট্যাংক ব্রিগেড ও কোর আর্টিলারি মোতায়েন করেন।

এই হিসাব থেকে এ কথা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, পূর্ব পাকিস্তান দখলে জগজিৎ সিং অরোরার অন্তত কয়েক মাস লেগে যেত। আমাদের সৈন্যরা ভারতীয় সৈন্যদের তিন সপ্তাহ সীমান্তে আটকে রাখে এবং পরে তাদেরকে প্ররোচিত করে আমাদের মূল প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এ পরিস্থিতিতে জগজিৎ সিং অরোরা পূর্ব পাকিস্তান দখলের চিন্তাও করতে পারেন নি ।

অন্যদিকে, আমরা প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালন করেছিলাম। ৫ই ডিসেম্বর আমাদেরকে ভারতীয় সৈন্যদের পূর্ব রণাঙ্গন থেকে পশ্চিম রণাঙ্গনে অপসারণের সুযোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা এ নির্দেশ পালনে সফল হয়েছি। সত্যি, ভারত পূর্ব রণাঙ্গন থেকে একটি ইউনিটও পশ্চিম রণাঙ্গনে স্থানান্তর করতে পারে নি।

পূর্ব পাকিস্তানের লড়াই পশ্চিম পাকিস্তানে করা হবে বলে যে পরিকল্পনা ছিল, পশ্চিম পাকস্তিানের সেনাবাহিনী সে লড়াই করতে পারে নি। তাদের ব্যর্থতার জন্যই আমাদের বিপর্যয় ঘটে। অথচ লড়াইয়ে জেতার মতো তাদের পর্যাপ্ত সৈন্য, বিপুল সম্পদ ও উদ্যোগ ছিল। আমরা পূর্ব রণাঙ্গনে ১২তম ডিভিশন ভারতীয় সৈন্যকে আটকে রেখে পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলাম।

 

ময়মনসিংহ,টাঙ্গাইল ও ঢাকা সেক্টর

 

ঢাকা দখল করতে হলে ভারতীয়দেরকে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হতো এবং আমার বাহিনীকে ধ্বংস করতে হলে তাদের প্রচুর প্রাণহানি ঘটতো। কিন্তু তাদের ভাগ্য ভালো যে, আমার হাই কমান্ডের ভুলের কারণে তাদের সামরিক বিপর্যয় একটি বিজয়ে পরিণত হয়েছে। আমাকে শুধু সাংকেতিক ভাষায় বলা হয়, ‘থামো নীল, লাল জয়ী হয়েছে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment