আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ঢাকার প্রতিরক্ষা। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
ঢাকার প্রতিরক্ষা
ঢাকার প্রতিরক্ষা
জেনারেল জামশেদ ছিলেন ঢাকা দুর্গের সার্বিক দায়িত্বে। ১৯৭১ সালের অক্টোবর থেকে প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরির কাজ শুরু হয়। ৭ই ডিসেম্বর জেনারেল জামশেদের সভাপতিত্বে ঢাকার প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় একটি বৈঠক হয়। পূর্ব দিক থেকে তাৎক্ষণিক একটি হুমকির সম্ভাবনা ছিল। হিসাব করে দেখা যায় যে, ঢাকায় হামলার প্রস্তুতি গ্রহণে শত্রুর অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
জেনারেল জামশেদ নতুন করে দায়িত্ব বণ্টন করেন। ৩৬(এ) ডিভিশনের ৯৩(এ) ব্রিগেডকে মিরপুর ব্রিজ, ১৪তম পদাতিক ডিভিশনকে নরসিংদী, ৯৩ (এ) ডিভিশনের বাদ-বাকি অংশকে নারায়ণগঞ্জ এবং কর্নেল ফজলে হামিদের নেতৃত্বে ৩১৪(এ) ব্রিগেডকে মুন্সীগঞ্জের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত করা হয়।
উঙ্গীসহ ক্যান্টনমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্রিগেডিয়ার কাসিমকে। ব্রিগেডিয়ার বশীর নগরীর প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থেকে যান। মূল পরিকল্পনায় ঢাকা রক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল ৫৩তম ব্রিগেডের ওপর। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে ৫৩তম ব্রিগেডকে বিদ্রোহ দমনে ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেওয়া হলে আমি ঢাকার প্রতিরক্ষার জন্য ফরমেশনগুলোর অতিরিক্ত সৈন্যদের নিয়োজিত করি।
আমি ৪টি স্তরে ঢাকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিন্যাস ঘটিয়েছিলাম। (১২ নং মানচিত্র দেখুন)। পরিকল্পনা ছিল যে, সুরক্ষিত এলাকায় চূড়ান্ত যুদ্ধ হবে। শহরের অভ্যন্তরে অথবা আশপাশে অবস্থান গ্রহণের মধ্য দিয়ে শহরগুলো রক্ষার পরিকল্পনা করা হয় না।
যতোটুকু দূরে সম্ভব ততোটুকু দূরে শহরগুলো রক্ষায় অবস্থান গ্রহণ করা হয় যাতে শহরগুলো শত্রুর গোলাবর্ষণের বাইরে থাকে। তবে সামরিক বিবেচনাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং সর্বশেষ লড়াই হয় শহরের ভেতরে ও আশপাশে। পশ্চিম পাকিস্তানে আমরা ওয়াগাহ, ঘাভিন্দি ও কাসুর এলাকায় সৈন্য মোতায়েন করে লাহোর রক্ষা করেছি। লাহরের ভেতরে কোনো নিয়মিত সৈন্য রাখা হয় নি।
আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে একটি প্রয়োজনীয় দিক হচ্ছে, শত্রুকে তার সৈন্য চলাচল এবং পরিবহনের সুযোগ না দেওয়া। পাল্টা হামলা, শত্রুর অবস্থান অবরোধ, গেরিলা কৌশল অবলম্বন এবং প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে।
শত্রুকে সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা অবস্থানে হামলা চালানোর জন্য প্ররোচিত করার আগে তাকে দুর্বল করে দেওয়া যেতে পারে এবং এরপর শত্রু ক্লান্ত বিশৃঙ্খল ও হতোদ্যম হয়ে পড়লে তার ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানতে হবে। কোথাও অবস্থান নেওয়ার সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে যেন শত্রুর ওপর চূড়ান্ত হামলা করা যায়।
প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণকালে শত্রুকে ধোকা দেওয়ার কৌশল, হিসাব মতো কার্যকর গোলাবর্ষণ, নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সৈন্য চলাচলের জন্য সুষম পকিল্পনাই হচ্ছে একমাত্র রক্ষাকবচ।
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বাধাগুলোর উপযুক্ত ব্যবহার, সেনা-পরিচালনা, গোলাগুলি ও যোগাযোগ, সৈন্যদের যুদ্ধ করার আগ্রহ ও দক্ষ নেতৃত্বই যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে।শত্রুর সম্পদ ও অভিপ্রায় এবং আমার ওপর অর্পিত দায়িত্বের সীমারেখা বিবেচনায় রেখে আমি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুত করি।
আমি আমার কমান্ডারদের শুধু শত্রুর হামলা ব্যর্থ করার দায়িত্বই নয়, শত্রুকে আমাদের শক্ত অবস্থানের কাছে প্ররোচিত করে নিয়ে আসা এবং সেখানে তাদেরকে লড়াইয়ে জড়িয়ে ফেলা এবং এভাবে শত্রুকে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ঢাকা থেকে দূরে রাখার দায়িত্বও অর্পণ করি।
ঢাকার আশপাশের এলাকা ছিল প্রতিরক্ষার জন্য খুবই উপযোগী। এটা ছিল। অনেকটা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো। ঢাকার দুই পাশে ও পেছনে নদী। নারায়ণগঞ্জ শহর হচ্ছে এই ‘U’র মধ্যে। এটি ঢাকা প্রতিরক্ষা লাইনের প্রশস্ততা বৃদ্ধি করেছে। এবং পেছনের দিক রক্ষা করছে। উত্তরাঞ্চলে রয়েছে চতুর্থ বাহু।
এখানে কোনো বড়ো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। এই গোটা প্রতিরক্ষা এলাকার আশপাশে পুকুর, খাল-বিল ও বিচ্ছিন্ন ক্ষেত-খামার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ঘন গাছপালা ও সবজি ক্ষেত যেগুলো প্রতিরক্ষা অবস্থানকে আড়াল করে রাখতে সহায়তা দেয়।
সিমেন্ট ও ইট পাওয়া না যাওয়ায় স্থানীয় মাল-মসল্লা দিয়ে বাংকার তৈরি করা হয়। অধিকাংশ বাড়ি-ঘর পাকা হওয়ায় সেগুলোকে সুরক্ষিত অবস্থানে পরিণত করা সহজ ছিল। পারস্পরিক সহায়তাদানকারী অবস্থানগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক ছিল এবং ব্যাটালিয়ন থেকে ওপরের দিকে ফরমেশনগুলোতে রিজার্ভ সৈন্য রাখা হয় এবং এ প্রতিরক্ষা এলাকার অভ্যন্তরে চলাচলের সর্বোচ্চ সুবিধা ছিল।
অবস্থানগুলোতে কোথাও ছিল এক কোম্পানি সৈন্য, কোথাও বা এক ব্যাটালিয়ন। বিকল্প অবস্থান এবং শত্রুর অবস্থানভেদ করার মতো অবস্থান ও তৈরি করা হয়। এক কথায় এটা ছিল একটি চৌকস প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ।
প্রতিরক্ষায় আমরা ব্যাপকভাবে গুপ্ত বন্দুকধারী (স্নাইপার) ব্যবহার করি। তাদের দায়িত্ব ছিল কমান্ডার ও তাদের সিগনালারদের তুলে নিয়ে আসা । কমান্ডার আক্রান্ত হলে হামলায় বিপর্যয় ঘটতে পারে। একইভাবে সিগনালার আক্রান্ত হলে সিনিয়র ও জুনিয়র অফিসারদের সাথে কমান্ডারের যোগাযোগ ব্যাহত হয়।
আমার উভয় পাশ থেকে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ক্ষতিসাধন হামলার জন্য সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রও ব্যবহার করি। পরিকল্পনা করা হয়, আক্রমণকারী ইউনিট বা সাব- ইউনিটগুলো আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হলে পিছিয়ে আসবে। পার্শ্বদেশ থেকে গোলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে আক্রমণকারী সৈন্যরা তাদের লক্ষ্যস্থলে এগিয়ে যাবে। এই লক্ষ্যস্থলে পরিকল্পনা অনুযায়ী আক্রমণকারী সৈন্যরা আর্টিলারি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখবে।
শত্রুরা আমাদের পরিখায় পৌঁছে গেলে আমরা আমাদের নিজেদের আর্টিলারি ও মর্টারের সাহায্যে আমাদের নিজস্ব পরিখায় গোলাবর্ষণ করবো। আমাদের সৈন্যদের তাতে কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, তাদের মাথার ওপরে থাকবে দুর্ভেদ্য আচ্ছাদন।
হতাহত হবে কেবল শত্রুপক্ষ। আমাদের গোলাবর্ষেণেও শত্রুরা জীবিত থাকলে আমরা বেয়নেটের সাহায্যে পাল্টা হামলা চালিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদ অথবা ধ্বংস করবো। আমাদের বেয়নেট চার্জ বরাবরই সফল হয়েছে।
মরুময় অথবা উন্মুক্ত দেশের মতো পূর্ব পাকিস্তানের কোনো সমান্তরাল রেখায় প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলো গড়ে তোলা হয় নি। সর্পিল রেখায় একটি বৃত্তাকারে প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলো বিন্যাস করা হয়। এগুলো ছিল অনেকটা জালের গ্রন্থির মতো। প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা এবং ভৌগোলিক কারণে ঢাকার বাইরে মধ্যবর্তী প্রতিরক্ষা লাইনে শত্রুকে ট্যাংকের সমর্থনপুষ্ট হয়ে অন্তত এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে অধিকাংশ হামলা চালাতে হতো।
অনুরূপভাবে গোলান্দাজ সহায়তা নির্দিষ্ট অবস্থান পর্যন্ত সীমিত থাকতো। আমাদের সৈন্যদের মাথার ওপরে শক্ত আচ্ছাদন থাকায় কামানের গোলাবর্ষণ কার্যকর হতো না। ঘটনাক্রমে শত্রু কোনো অবস্থান দখল করে নিলেও তারা গভীরে প্রবেশ করতে পারতো না। কারণ, অব্যবহিত পেছনের অবস্থান অথবা পার্শ্ববর্তী অবস্থানে এসে তাদেরকে থেমে যেতে হতো।
আমরা চোরা ফাঁদ, বাঁশের ফলা ও খাদের ব্যাপক ব্যবহার করেছিলাম । আমাদের অবস্থানের সামনে ও আশপাশের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত করা হয় এবং প্রয়োজন হলে আরো এলাকা প্লাবিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এটা ছিল শত্রুর ট্যাংক, যানবাহন ও পদাতিক সৈন্যের বিরুদ্ধে একটি উত্তম প্রতিরোধক অবস্থানগুলো আড়াল করে রাখা হয় এবং ধোঁকা দেওয়ার জন্য নকল ট্যাংক, যানবাহন ও অস্ত্রশস্ত্রের অবস্থান প্রস্তুত করা হয় ।

বুলডোজার, ট্রাক্টর, ট্রাক, ট্রলি, ওয়াগান, জিপ ও নৌকা সংগ্রহ করা হয়। এবং বালির বস্তা দিয়ে সেগুলোকে ভ্রাম্যমাণ শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত করা হয়। এগুলোকে প্রতিরক্ষা অবস্থানগুলোয় যে কোনো ফাঁক-ফোকর পূরণ, প্রয়োজনে যে কোনো এলাকার শক্তি বৃদ্ধি, পাল্টা হামলা এবং পাল্টা অনুপ্রবেশে সৈন্য পরিবহনে ব্যবহার করা যেত।
এ ছাড়া, রসদ সরবরাহ এবং হতাহতদের অপসারণেরও কাজে লাগানো যেত। আমাদের গোলাবারুদ ও রেশন এবং ক্ষুদ্র অস্ত্রশস্ত্রের কোনো অভাব ছিল না। টঙ্গী-ডেমরা এলাকায় আমাদের একটি দুর্বল ট্যাংক স্কোয়াড্রন মোতায়েন ছিল। আমাদের পর্যাপ্ত তিন ইঞ্চি ব্যাসের মর্টার, প্রচুর ১০৬ রিকয়েললেস রাইফেল, সিক্স পাউন্ডারগান এবং বিপুল পরিমাণ ট্যাংক-বিধ্বংসী স্বল্পপাল্লার অস্ত্র ছিল। এ ছাড়া আমাদের একটি এএ রেজিমেন্টও ছিল।
আমার প্রচুর সিনিয়র এনসিও, জেসিও অফিসার ছিল, সুতরাং আমার কমান্ড কাঠামো ছিল খুবই ভালো অবস্থায়। উদাহরণস্বরূপ, জিসিও (জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার)-গণ সেকশন এবং সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে লেফটেন্যান্টসহ ক্যাপ্টেনগণ প্লাটুনের নেতৃত্বে ছিলেন।
আমি ছাড়া আরো তিনজন মেজর জেনারেল, একজন এডমিরাল, একজন এয়ার কমোডর এবং বেশ কয়েকজন ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। মোটের ওপর দুর্ভেদ্য না হলেও ঢাকায় আমার প্রতিরক্ষা ছিল খুবই শক্তিশালী এবং এখানে একটি আদর্শ প্রতিরক্ষা অবস্থানের সব উপাদান বিদ্যমান ছিল।
চারটি বিন্যাসে ঢাকার প্রতিরক্ষা পুনর্গঠন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে : বাইরের প্রতিরক্ষা :
- বেড়া-পাবনা লাইন ১৬তম ডিভিশন।
- মধুমতী রিভার লাইন ৯ম ডিভিশন ।
- পুরনো ব্রহ্মপুত্র লাইন ৯৩তম ব্রিগেড।
- আশুগঞ্জ-দাউদকান্দি-চাঁদপুর লাইন ১৪/৩৯তম ডিভিশন।
মির্জাপুর-জয়দেবপুর-নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ লাইন ভিত্তিক ঢাকা ত্রিভুজ । ঢাকা নগরীর বহিঃস্থ প্রতিরক্ষা— সাভার, মিরপুর, টঙ্গী, ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জ লাইন । ক্যান্টনমেন্ট ও নগরীর সুরক্ষিত এলাকা।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা প্রতিরক্ষার জন্য নিম্নোক্ত সেনাদের পাওয়া যায় :
১. এডহক স্কোয়াড্রন অব ট্যাংকস-৫০
২. আর্টিলারি (৬ এলএএ রেজিমেন্ট, প্রচুর গোলাবারুদসহ সব কামান অক্ষত, হেডকোয়ার্টার্স আর্টিলারি)-৭০০
৩. ইঞ্জিনিয়ার্স (বিভিন্ন ইউনিটের পশ্চাৎভাগ রক্ষাকারী পক্ষ, এক ব্যাটালিয়ান হিসেবে হেডকোয়ার্টার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-৫০০
৪. সিগনাল (৩ ব্যাটালিয়ন ইউনিট)-২,০০০
৫. পদাতিক (৩১ বালুচ, ৩৩ পাঞ্জাব, সাবেক ৯৩ [এডহক) ব্রিগেড, দুই কোম্পানি কম একটি কমান্ডো ব্যাটালিয়ন) -৪,৫০০
৬. মাগুরা সেক্টরের জন্য সৈন্য-৯০০
৭. সার্ভিসেস (অস্ত্র ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠা ওয়ার্কসপ-১,০০০
৮. নেভি (মেরিনস)-৫০০
৯. এয়ার কমান্ডো (পিএএফ) -৫০০
১০. ইপকাফ-৪,৫০০
১১. মুজাহিদ-১,৫০০
১২. রাজাকার-৭০০
১৩. পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ -২,৫০০
১৪. শিল্প নিরাপত্তা সেনা-১,৫০০
১৫. ইস্টার্ন কমান্ড ও ৩৬ ডিভিশনের সদর দপ্তর)-৯,০০০
মোটঃ-৩০,৩৫০
ঢাকা সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল জামশেদ, যিনি ছিলেন একজন সাহসী জেনারেল। তিনি দুটি মিলিটারি ক্রস ও সিতারা-ই-জুরাত’ পদক লাভ করেন। প্রতিটি অক্ষ দেখাশোনা করতেন একজন ব্রিগেডিয়ার। সাব- ইউনিটগুলো কমান্ড করতেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং প্লাটুনগুলো মেজর অথবা ক্যাপ্টেন।
শত্রুরা ঢাকা পৌঁছার আগে ১৩/১৪ ডিসেম্বরের মাঝরাতে আমরা আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাই। ১৬ই ডিসেম্বর দুপুরে শত্রুর প্রথম দলটি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। এ সময় আত্মসমর্পণের খুঁটিনাটি বিষয় চূড়ান্ত করা হচ্ছিল।
ঢাকায় হামলা চালাতে শত্রুদেরকে আরো দুই সপ্তাহ প্রস্তুতি নিতে হতো। ভারতীয়রাই এই কথা স্বীকার করেছে। আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া না হলে আমি দীর্ঘদিন ঢাকা রক্ষা করতে পারতাম।
ভারতীয়রা এতো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ছিল, এতো বাজেভাবে সম্পৃক্ত ছিল। যে, তারা কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না। ভৈরব সেতু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা ট্যাংক ও কামান আনতে পারছিল না।
ঢাকার কাছে তাদের প্রায় সাড়ে ৪ ব্রিগেড সেনা ছিল। তবে তাদের কোনো ট্যাংক ও কামান ছিল না । সুতরাং ঢাকার সাথে তাদের মোকাবিলা করার কোনো আশা ছিল না। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ভারতীয়রা আমাদের হাতে চরমভাবে জেহাল হতো।
আরও দেখুন: