চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা – মাসুদুল হক

চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা : ১৯৬২ সালের চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক গুণগত পরিবর্তন সূচিত করে। সেটা হচ্ছে এই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব খানকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। পরিকল্পনা রচনার দায়িত্ব পড়ে সিআইএ-র ওপর আর ভারত পরিকল্পনা নেয় পাস্তিানের অঙ্গহানি ঘটাবার— পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব অর্পিত হয় ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওপর। আমরা প্রথমে মার্কিন প্রশাসন তথা সিআইএ-‘র আইউব উৎখাত পরিকল্পনায় আসতে পারি। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আইউবের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের বিরোধ বিষয়ক আলোচনায় আসতে হয় আগে।

চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

আইউব খান পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করেন ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে। অথচ দেখা গেল, এক সময় মার্কিন প্রশাসন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আইউব খান বঞ্চিত হয়ে গেছেন মার্কিনী বন্ধুতা থেকে। কেন এ রকমটি ঘটে? চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধই আনে এই পরিবর্তন। অপরদিকে, যে ভারতকে একদা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত মনে করা হতো ওই যুদ্ধ দৃশ্যত সেই ভারতকে সাম্রাজ্যবাদের নেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপুটে অধিকমাত্রায় ঠেলে দেয়।

[ চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা – মাসুদুল হক ]

ভারতের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে আসে গুণগত পরিবর্তন। চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের পর ভারতের ক্ষেত্রে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটা পরিবর্তন সূচিত হয়, তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত এভারেল হ্যারিম্যানের ভাষ্য থেকে। ১৯৬৩ সালের গোড়ার দিকে প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি তার ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত এভারেল হ্যারিম্যানকে পাঠান ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহেরুর সমাজতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা নিতে। দিল্লীতে কয়েকদিন কাটানোর পর ওয়াশিংটন ফেরার পথে পালাম বিমান বন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কমিউনিজমের বিস্তার রোধে পণ্ডিত নেহেরুর সমাজতন্ত্র কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দিয়ে যাবে।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 42 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বিতর্কিত ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে। ১৯৬২ সালের ১৩ অক্টোবর চীন ভারতকে কাশ্মীর এলাকার লাদাখ সীমান্ত থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নিতে বলে। ভারত চীনের এই দাবি অগ্রাহ্য করায় এক সপ্তাহ পর অক্টোবর দু’ দেশের সশস্ত্র বাহিনী সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ২০ নভেম্বরের মধ্যে। কাশ্মীরের লাদাখ এলাকার দু’হাজার বর্গমাইল এবং তিব্বত সীমান্তের নো (উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এলাকা) এলাকার দেড় হাজার বর্গমাইল ভারতীয় ভূখণ্ড চীনের দখলে চলে। আসে এবং ২১ নভেম্বর চীন একক যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে দখলীকৃত সমগ্র এলাকা থেকে সৈন্য অপসারণ করে ম্যাকমোহন লাইনের ওপারে চলে যায়।

যুদ্ধ চলাকালীন ২৮ অক্টোবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি এক চিঠিতে কমিউনিস্ট চীনকে রুখতে ভারতের সহায়তায় এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান আইউব খানকে। চিঠিতে প্রেসিডেন্ট কেনেডি কাশ্মীর সমস্যাকে আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সমস্যার গুরুত্ব তিনি অনুধাবন করেন এবং বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না। তবে এই মুহূর্তে চৈনিক আগ্রাসনকে রুখে দাঁড়ানোই মুখ্য বিষয়। তিনি বলেন, আগ্রাসন রোধে বাইরে থেকে ভারতের জন্য সাহায্য প্রেরণ করা যেতে পারে। কিন্তু আঞ্চলিক সহায়তা তার চেয়ে হবে অধিকতর কার্যকর।

প্রেসিডেন্ট কেনেডি এই চিঠিতে চীনের বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে এক শান্তি চুক্তিতে আসতে বলেন যা সামরিক চুক্তিরই নামান্তর। আইউব খান সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। ফলে মার্কিন প্রশাসন তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 41 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

এ ঘটনার তিন বছর আগেই আইউব খান মার্কিন সরকারের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার কারণে। তার সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেন আইউব ১৯৫৯ সালে। চীন-পাকিস্তান সীমান্ত চিহ্নিতকরণের মধ্য দিয়ে এ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর বদলে পাকিস্তান জাতিসংঘের চীনের সদস্য পদ লাভের বিষয়টি সমর্থন করে। জাতিসংঘের দরোজা তখন চীনের জন্য ছিল রুদ্ধ এবং তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ-নীতির অন্যতম দিক ছিল কমিউনিস্ট চীনকে জাতিসংঘে ঢুকতে না দেয়া।

চীনের পক্ষে এই ভূমিকায় আইউবের প্রতি বিশেষভাবে নাখোশ হয় মার্কিন প্রশাসন। কেননা, মার্কিনীদের শত্রু তালিকায় মাও সেতুং-এর চীন ছিল শীর্ষে এবং পাকিস্তান-চীন সীমান্ত চিহ্নিতকরণের পর থেকেই চীন দিনে দিনে হয়ে যায় পাকিস্তানের পয়লা নম্বরের বন্ধু। ওই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল কমিউনিজমকে রোখা; দুই বৃহৎ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের প্রভাব বলয়কে সংকুচিত করে তাদেরকে এক ঘরে করে রাখা। সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন সম্পর্কই ছিল না।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 40 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

১৯৪৯ সালে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে কামিউনিস্ট বিপ্লবের পর থেকে ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিকসনের নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সফরের আগ পর্যন্ত চীন নামক দেশটি ছিল মার্কিন প্রশাসনের কাছে একটি ‘নিষিদ্ধ দেশ’। অতএব, এহেন চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানি প্রয়াসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবতই সুনজরে দেখতে পারে না। আর এই নিষিদ্ধ দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যে ব্যক্তিটি বিশেষ তৎপরতা দেখাবেন, তিনিও একই কারণে মার্কিন প্রশাসনের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ তৎপরতা গ্রহণে আইউবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো মার্কিন প্রশাসনের কাছে বিরক্তিভাজন ব্যক্তিতে পরিণত হন। তাকে সরিয়ে দেয়ার চাপ প্রয়োগ করে তৎকালীন মার্কিন সরকার। কিন্তু আইউব খান মার্কিনী চাপ প্রতিহত করে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে স্বপদে বহাল রাখেন। এ বিষয়টিও তার সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 39 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

আর যে সোভিয়েট ইউনিয়ন ছিল মার্কিনীদের সুবাদে পাকিস্তানের ‘দুশমন’ তার প্রতিও আইউব খান বন্ধুত্বের হস্ত প্রসারিত করেন পাকিস্তানে সিআইএ’র গোপন সামরিক ঘাঁটি তুলে দিয়ে। ষাট দশকের গোড়াতে পাকিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক অবিশ্বাস ও তিক্ততা পর্যায়ের। এ সময় পেশোয়ারের বাটাভের এলাকায় ছিল সিআইএ’র গোপন সামরিক ঘাঁটি। এ ঘাঁটি থেকে সিআইএ ইউ-২ গোয়েন্দা বিমান পাঠায় সোভিয়েতের অভ্যন্তরে।

সোভিয়েত মিসাইল পাইলট গ্যারী পাওয়ারসহ ইউ-২ অপারেশন বিমান নামিয়ে আনে ভূমিতে এবং তৎকালীন রুশ প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চভ পাকিস্তানকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দেন যে পেশোয়ারের বাটাভের রুশ মিসাইলের নাগালের মধ্যেই আছে। অতএব, আইউবকে মার্কিনীদের নাখোশ করেই বাটাভেরের সিআইএ’র গোপন অপারেশন ঘাঁটি দিতে হয় বন্ধ করে। এ ঘটনার পরই আইউবকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। আইউবের বিদেশ-নীতিতে সোভিয়েট ইউনিয়নের ব্যাপারে সূচিত হয় পরিবর্তনের ধারা।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 37 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

এখানে প্রাসঙ্গিক কারণেই প্রশ্ন এসে যায় যে, মার্কিনীদের সহায়তায় ১৯৫৮ সালে আইউব আসেন পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায়, সেই আইউব মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে অর্থাৎ ১৯৬১ সালের শুরু থেকেই তার মদদদানকারী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন কেন?

পঞ্চাশ দশকের শেষপাদ থেকে পাকিস্তানের উদীয়মান ধনিক শ্রেণীর ভিত গড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু তার বিকাশের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজি। পাকিস্তান তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোকে তাদের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানায়। উপরন্তু দ্রুত শিল্পায়নের জন্য অপরিহার্য যে ভারি শিল্প, তা গড়ে তোলার পদক্ষেপে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ওই সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজি।

আইউব খান যেহেতু পাকিস্তানের উদীয়মান ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধি, নিজ শ্রেণী স্বার্থেই সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সংঘাত তার অনিবার্য হয়ে ওঠে। আইউব খানের ভাষায়, “যদি উন্নত দেশগুলো আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে না চায়, আমরা কি করবো? আমাদের বৈদেশিক পণ্যের চাহিদা মেটানো দূরে থাক, তাদের দেয়া ঋণ পরিশোধ করবো কিভাবে? প্রদত্ত ঋণের

সুদই বা মেটাবো কি করে? এই পরস্পর বিরোধী স্বার্থ নিয়ে বিশ্বব্যাপী একটা বড় রকমের সংঘাত একদিন লেগেই যাবে। আমি মনে করি, পরিণামে ধনবাদী দেশগুলো একদিন দেখবে যে তারা একঘরে হয়ে গেছে। যদি তারা আমাদের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করে না দেয়, তাদের শিল্পের কাঠামোগত দিকের তেমন পরিবর্তন না আনে, যাতে ছোট ছোট দেশগুলোর
চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 36 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

জন্য পণ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তারা আংশিক প্রক্রিয়াজাত কম উন্নতমানের জিনিস তৈরি করতে পারে। …দৃষ্টান্তস্বরূপ, আমেরিকানরা সবাই আশা করে এবং অনুমতি দিয়েছে যে পাকিস্তান তাদের দেশে বছরে ২৫ মিলিয়ন গজ কাপড় রফতানি করতে পারবে। এটা পরিমাণের দিক দিয়ে অতি নগণ্য এবং হাস্যকর পরিমাণও বটে। কাপড় পাকিস্তানের একটি অন্যতম প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্য। অন্যান্য পণ্যের বেলায় একই নীতিমালা প্রয়োগ করা হয়েছে।

… কয়েক বছর আগেও ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের কোন লেনদেন সমস্যা ছিল না। অথচ পাস্তিান থেকে সুতা ও সুতী কাপড় আমদানির ওপর কোটা আরোপ করে। ১৯৬২ সালে বিষয়টি ব্রিটেনের কমনওয়েলথ সচিব মি. ডানকান স্যান্ডসের কাছে উত্থাপন করি। তিনি জানান, ম্যানচেস্টারের বস্ত্রশিল্প দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকারকে ম্যানচেস্টারবাসীদের ভোটের কথা ভাবতে হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ম্যাকমিলানকে জানালে তিনি বলেন,

‘এই ভোটের ব্যবসার ধরনই আলাদ। আমরা তাদেরকে (ভোটার) উপেক্ষা করতে পারি না।’ তাহলে কেন আমরা শুধু ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক গিটে বাঁধা থাকব? যাদের সঙ্গে সম্ভব, তাদের সাথেই বাণিজ্যিক বন্ধনে আবদ্ধ হবো এবং এমন ব্যবস্থা আমরা অবলম্বন করবো যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারি। … এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ কারণে আমি আফ্রো-এশীয় দেশগুলোর দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছি।

আফ্রো-এশীয় দেশসমূহের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আইউব খান সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করলেও ওই মাসে সম্মেলন আর হতে পারে নি।। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও তার পক্ষে তাতে যোগদান করাও ছিল দুঃস্বপ্নের সামিল। কেননা, সম্মেলনের আগেই সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে সিআইএ’র আঘাত আসে তার ওপর। সিআইএ’র সে আঘাত মোকাবেলায় তিনি তখন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দানে।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 31 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

অনুষ্ঠেয় আফ্রো-এশীয় দ্বিতীয় সম্মেলনের ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইউব যে ভূমিকা নেন, তাতে তার ওপর মার্কিন প্রশাসনের আগ্রহ থাকার কারণ আর বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকে না। এই সম্মেলনে মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতায় দাঁড়িয়ে যান আইউব খান। আর তার অন্তর্ভুক্তির পক্ষে নামেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহেরু।

১৯৬৩ সালে তৎকালীন মালয় প্রধানমন্ত্রী টুংকু আবদুর রহমানের মালয়েশিয়া ফেডারেশন গঠনে সারা ইন্দোনেশিয়া প্রচণ্ড রোষে ফেটে পড়ে। ওই বছর আগস্ট মাসে মালয় এবং ব্রিটিশ সরকার সারাওয়াক ও উত্তর বোর্নিওর (সাবাহ) মালয় অংশ এবং ব্রিটিশ আশ্রিত অঞ্চল নিয়ে মালয়েশিয়া ফেডারেশন গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 30 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে এই অভিযোগে যে, সেখানকার জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই ফেডারেশন গঠন করা হবে। ফলে ফেডারেশন গঠন পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয় এবং পরে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রেরিত একটি মিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া ফেডারেশনের জন্ম হয় ওই বছর সেপ্টেম্বর মাসে। ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট সুকার্নো মালয়েশিয়া গঠনকে ওই এলাকার জনগণের বিরুদ্ধে একটি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বলে ঘোষণা করেন এবং ১৯৬৪ সালে মালয়েশিয়ার ভূখণ্ডে নেমে যায় ইন্দোনেশীয় সৈন্য।

সুকার্নোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর সুবান্দ্রিও একুশ লাখ সদস্য সংগ্রহ করেন ‘ক্রাশ মালয়েশিয়া মালয়েশিয়াকে খতম কর’ কার্যক্রমে অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদে মালয়েশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করলে প্রেসিডেন্ট সুকার্নো জাতিসংঘ থেকে বেরিয়ে আসেন। ঘোষণা দেন, জাতিসংঘ সম্রোজ্যবাদীদের দাবার ঘুঁটি। তিনি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জাতিসংঘ গড়ে তোলার আহবান জানান এবং দ্বিতীয় আফ্রো-এশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কার্যক্রম হাতে নেন।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 27 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় আফ্রো-এশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সকে সম্মেলন স্থান করা হয়। কিন্তু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কয়েকমাস আগে এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রেসিডেন্ট বেন বেল্লাকে অপসারণ করে ক্ষমতায় আসেন হুয়ারি বুমেদিন। ফলে দ্বিতীয় আফ্রো-এশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়টি দোদুল্যমানতার মধ্যে নিপতিত হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বুমেদিন সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্থির প্রতিজ্ঞ থাকেন।

ওই বছর জুলাইয়ের পরিবর্তে সেপ্টেম্বর মাসে সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্মেলনে সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির সমর্থন এবং মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেন আইউব। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরু নেন উল্টো ভূমিকা। তিনি দাঁড়িয়ে যান মালয়েশিয়ার অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 21 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

এরপরও একজন রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিকে আর ব্যাখ্যা করে বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না যে, দিনে দিনে আইউব খান মার্কিনী প্রশাসনের কাছে কি ধরনের অপাংক্তেয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে পড়েন। কি ধরনের অপাংক্তেয়,— সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিচ্ছেন জি ডবলিউ চৌধুরী তাঁর দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান গ্রন্থে।

১৯৬৫ সালের ৩ এপ্রিলে মস্কো সফরে যান আইউব খান। সেখান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটন সফরের পরিকল্পনা ছিল তার। আইউব ওই সফরের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে চেয়েছিলেন। তার ওই সফর পরিকল্পনাকে অত্যন্ত “অভদ্রোচিতভাবে প্রত্যাখ্যান করে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন। “প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন জানিয়ে দেন যে আইউব খানকে ওয়াশিংটনে অভ্যর্থনা জানানো হবে।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 17 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

অতএব, এটা পরিষ্কার যে ওয়াশিংটনের কাছে আইউবের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় অনেক আগেই এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হবার মুহূর্ত থেকেই আইউবের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। মার্কিন প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আইউবকে যেতে হবে।’ সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইউব উৎখাতের পরিকল্পনা তৈরিতে নেমে পড়ে সিআইএ–একটি সামরিক, অপরটি রাজনৈতিক চাপ। সামরিক চাপ ব্যর্থ হলে শুরু করা হবে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া।

১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধই হচ্ছে সিআইএ-‘র সেই সামরিক চাপ আর ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে অনুষ্ঠিত ডানপন্থী পাঁচ দলীয় জাতীয় সম্মেলনে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব সেই রাজনৈতিক চাপ

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 15 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

আইউবের ওপর মার্কিন প্রশাসন তথা সিআইএ-‘র যে চাপ আসছে, পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তা জানতে পায় এমন সময় যখন আইউবকে নেমে পড়তে হয় যুদ্ধের ময়দানে সিআইএ পরিকল্পিত বাইরের চাপ মোকাবেলায়।

পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এ তথ্য জানতে পায় হল্যান্ডে তাদের এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে। ওই সূত্রটি হচ্ছে হল্যান্ডে তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত কুদরত উল্লাহ শেহাব। এর আগে তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা সচিব। এই ব্যক্তি চীনের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন বলে আইউবকে মার্কিন চাপে তাকে প্রশাসন থেকে সরাতে হয় এবং হল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হয়।

রাষ্ট্রদূত শেহাবের সঙ্গে ন্যাটোর (উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা) এক পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, যিনি ছিলেন জেনারেলের পদমর্যাদাসম্পন্ন, তার সঙ্গে ছিল বন্ধুত্ব। ন্যাটোর ওই জেনারেল ছিলেন হল্যান্ডের অধিবাসী। তিনি পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতকে জানান যে চলতি বছর (১৯৬৫) সেপ্টেম্বর মাসে এশিয়ার দুটো দেশ– ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানে সিআইএ আঘাত হানতে যাচ্ছে।

পাকিস্তানের ব্যাপারে তিনি শুধু এইটুকুই বলতে পারেন যে আইউব উৎখাতে বাইরে থেকে একটি চাপ দেয়ার চেষ্টা হবে এবং সেটা সামরিক ধরনের। এটা ব্যর্থ হলে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় নামা হবে এবং সে চাপ পূর্ব পাকিস্তান থেকেই শুরু করা হতে পারে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধই হচ্ছে সেই সামরিক চাপ আর পূর্ব পাকিস্তান থেকে উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সেই রাজনৈতিক চাপ ।

চীন ভারত যুদ্ধ ১৯৬২ China India War 1962 14 চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা

১৯৬২ সালের চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধে আইউব খানের ভূমিকায় পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে ভারত। পাকিস্তানকে দুর্বল করার লক্ষ্যে সে পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নেয়। ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওপর সে পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব অর্পিত হয় ।

১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (Director of Intelligence Bureau D.L.B.) জানতে পায় যে কলকাতার ভবানীপুর এলাকার একটি বাড়িতে, যা ছিল ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অপারেশনাল সদর দফতর, সেখানে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি গোপন সংগঠন সক্রিয় রয়েছে তার উদ্দেশ্য, পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত করা।

Indian troops being inspected before leaving their posts in the Ladakh region চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এও জানতে পায় যে “চিত্তরঞ্জন সুতারী ও কালিদাস বৈদ্য” নামক দুই পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে এই গোপন সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। তাদেরকে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বলে মনে করতো। গোয়েন্দা সংস্থা আরো জানতে পায়, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামক সংগঠনটি সংখ্যালঘিষ্ঠ এলাকায় বিশেষ করে ফরিদপুরের সংখ্যালঘিষ্ঠ অঞ্চলে তৎপর রয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে ওই সংগঠনটি কিভাবে এবং কি পরিমাণে জড়িত ছিল, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেটা আবিষ্কার করতে পারে নি।

পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে নি ঠিকই, তবে ওই সময়ই ছাত্রদের মধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটে যায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের দাবি সংবলিত লিফলেট ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তার গোপন সংগঠন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মাধ্যমে বিলি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা পরবর্তীকালে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক আবদুর রাজ্জাক আমাকে দেয়া এক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে জানান, তিনিও ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি সংবলিত লিফলেট পেয়েছিলেন।

His Holiness the 14th Dalai lama with Jawahral Nehru চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

ওই সময় খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে একই ধরনের লিফলেট পাওয়া যায়। ওই লিফলেট যাদের হস্তগত হয়, তারা কেউই জানতে পায় না। কে বা কারা এসব বিলি করছে। খুলনার পিকচার প্যালেস সিনেমা হলে কিছু লিফলেট পাওয়া যায়। শো শুরু হবার আগ মুহূর্তে হলের বাতি নিভে যাবার সঙ্গে সঙ্গে লিফলেট দর্শকের মাঝে ছুঁড়ে মারা হয়।

১৯৬৮ সালে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে পুনর্গঠিত করা হয় এবং নামকরণ করা হয় ‘রিসার্স অ্যান্ড অ্যানাল্যাসিস উইং’ সংক্ষেপে ‘র’ (Research and Analyses Wing: Raw)। ‘র’ গঠিত হবার পর পূর্ব পাকিস্তানে পূর্বতন ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সৃষ্ট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ ছাত্রদের মধ্যে অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে ।

1962 war Truths that India still keeps close to its chest চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধ : সিআইএ এবং ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - মাসুদুল হক

৪. চিত্তরঞ্জন সুতার : বাড়ি পিরোপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় বাটনাতলা গ্রামে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর করতেন পাকিস্তান কংগ্রেস। বিয়ে করেন বরিশালের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা প্রাণকুমার সেনের কন্যাকে। ১৯৫৪ সালে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পিরোজপুর নির্বাচনী এলাকায় তফশিলীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে। কণিকা বিশ্বাস ও গোপালগঞ্জ সাতপাড় কলেজের বীরেন বিশ্বাসকে নিয়ে করেন গণমুক্তি পার্টি।

চিত্তরঞ্জন সুতার ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হতেই তিনি ভারতে চলে যান। ১৯৭৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিব নিহত হবার পরপরই তিনি আবার ভারতে চলে যান।

৫. কালিদাস বৈদ্য : কালিদাস বৈদ্য পেশায় ডাক্তার। বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায়। প্র্যাকটিস করতেন ঢাকায় শীখারি বাজারে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তিকালে পড়তেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তখন। পাকিস্তান সৃষ্টির কিছুদিন পর চলে আসেন ঢাকায় এবং ভর্তি হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে গণমুক্তি পাটির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল, ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ যদি না-ই থাকে, তবে সীমান্ত থাকবে কেন? ডাক্তার কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতার দুজনেই তথাকথিত স্বাধীন বঙ্গভূমির প্রবক্তা।

  • ১. মোহাম্মদ আইউব খান; ফ্রেন্ডস নট মাস্টারস পৃষ্ঠা-১৮৪-১৮৫
  • জি ডবলিউ চৌধুরী : দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান পৃষ্ঠা-১৭

আরও দেখুন…

 

Leave a Comment