আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ কিকরিমার টেকরিজ। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
কিকরিমার টেকরিজ
কিকরিমার টেকরিজ
এরপর রাজপুত রেজিমেন্টকে মোতায়েন করা হয় কিকরিমায়। এটা আসামের একটি গ্রাম। এলাকাটা ছিল পাহাড়ি এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা। সব ঋতুতে উপযোগী একটি রাস্তা কিকরিমা থেকে টেকরিজের দিকে গেছে। এরপর হঠাৎ বাঁক নিয়ে একটি এলাকা দিয়ে চলে গেছে যেখানে ১/১ পাঞ্জাব, ১৬১ ব্রিগেডের আরেকটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল।
ইতোমধ্যে জাপানিরা টেকরিজ দখল করে নিয়েছিল এবং তারা রাস্তাটি নিয়ন্ত্রণ করতো। টেকরিজে শত্রুর শক্তি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল কারগিল আমাকে দক্ষিণ পার্শ্ব থেকে আমার সেনাদল উঠিয়ে নিয়ে সেদিকে যাবার নির্দেশ দেন।
আমি এ অপারেশনের বিস্তারিত বিবরণ দেবো না। আমার কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল কারগিল যে, রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন এবং ব্রিগেডিয়ার ওয়ারেন অনুমোদন করেছিলেন, তা নিচে দেওয়া হলো । এতে যুদ্ধের সঠিক চিত্র ফুটে উঠেছে :
“এই অফিসারকে ১৯৪৪ সালের ১১ই জুন নির্দেশ দেওয়া হয় আসাম বার্মা সম্মুখ ভাগের জেসামি সড়কে কিকরিমা এলাকায় আমাদের অবস্থানের বাইরে তার সেনাদলকে নিয়ে যাবার জন্য শত্রুর শক্তি সম্পর্কে ধারণা করতে।
তিনি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে এসে রিপোর্ট করেন যে, শত্রুর অবস্থান খুব শক্তিশালী এবং তিনি অনেক বাংকার দেখতে পেয়েছেন। তার মতে, যদি তিনি হামলা চালাতেন তাহলে তিনি আকস্মিক বিজয় অর্জন ও শত্রুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারতেন।

৩৫ জন সৈন্য (তখনকার দিনে কোম্পানি কমান্ডারসহ ৩৫ জন সৈন্য নিয়ে একটা কোম্পানি গঠন হতো) নিয়ে তাকে এ হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এতো দক্ষতার সাথে তিনি অভিযান পরিচালনা করেন যে, তার অগ্রবর্তী প্লাটুন শত্রুর তিনটি বাংকার পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়।
অগ্রবর্তী প্লাটুনে প্রাণহানি শুরু হলে ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ নিজে দ্বিতীয়। প্লাটুনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং শত্রুর তিনটি বাংকার দখল করেন। অগ্রবর্তী প্লাটুন রিপোর্ট করে শত্রুরা পাল্টা হামলার জন্য তাদের দক্ষিণ পাশে সংগঠিত হচ্ছে।
ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে সুনিপুণভাবে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যান এবং ই ওয়াই” রাইফেলের সাহায্যে ৫টি গ্রেনেডের সব কটি ছুঁড়ে মারেন। এতে শত্রুপক্ষের অন্তত ৩০ জন মারা যায় এবং তিনি শত্রুর পাল্টা হামলার প্রচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ করে দেন।
এরপর তিনি তার সেনাদলের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করেন এবং শত্রুর অব্যর্থ গুলি ও প্রচণ্ড হামলার মুখে তার অবস্থান ধরে রাখেন। তাকে অবস্থান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলে অত্যন্ত দক্ষতা ও ঠাণ্ডা মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সব প্লাটুন প্রত্যাহার করেন। এ সময় প্রতিবার তিনি সবার পেছনে থাকতেন। যুদ্ধে জাপানিরা কমপক্ষে ৬০ জন মারা যায়। এরপর দিন জাপানিরা এলাকা ছেড়ে যায় যার কৃতিত্ব ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহর।”
বিজয়ের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয় আমাদের। ৮ জন মারা যায়। বাকিরা আহত হয়। কেউ সামান্য এবং কেউ মারাত্মক। তিনটি গুলি লাগে আমার। একটি গুলি আমার রসদবাহী বলে ভেদ করে উরুতে, দ্বিতীয়টি আমার কাঁধের ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলে এবং তৃতীয়টি ছিড়ে ফেলে আমার বুটের তলা। আমার ক্ষতগুলো মারাত্মক ছিল না।
ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স একটু উঁচু জায়গায় থাকায় সেখানে থেকে লক্ষ্যস্থল দেখা যেত। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কার্গিল এবং ব্রিগেডিয়ার জাডি ওয়ারেন যুদ্ধের অগ্রগতির পুরো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন বাইনোকুলারের সাহায্য।
টেকরি দখলের পর লেফটেন্যান্ট কর্নেল কার্গিল নীরবতা ভেঙে আমাকে অভিনন্দন জানান আমার সৈন্যদের চমৎকার কৃতিত্বের জন্য । যুদ্ধের ফলাফলে খুব আনন্দিত হন ব্রিগেডিয়ার ওয়ারেন। আমাকে তখনই ‘মিলিটারি ক্রস’ (এমসি) পদক দেওয়া হয়। কোর কমান্ডারগণ টেলিফোনে অভিনন্দন জানান আমাকে। সরকারি নথি পরে পাঠানো হয়।
আরও দেখুন: