ওয়েলেসলির অগ্রসর নীতি এর সাফল্য আজকের আলোচনার বিষয়। “ওয়েলেসলির অগ্রসর নীতির সাফল্য [ Success of Wellesley’s progressive policies ]” ক্লাসটি এইচএসসি [ HSC ] তথা একাদশ শ্রেণী [ Class 11 ] এবং দ্বাদশ শ্রেণী [ Class 12 ] এর ইতিহাস ১ম পত্র [ History 1st Paper ] বিষয় এর, ২য় অধ্যায়ের [ Chapter 2 ] পাঠ।
ওয়েলেসলির অগ্রসর নীতি এর সাফল্য
ওয়েলেসলী, লর্ড (১৭৬০-১৮৪২) ১৭৯৮ থেকে ১৮০৫ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল। ১৭৬০ সালের ২০ জুন জন্মগ্রহণকারী রিচার্ড কোলি ওয়েলেসলী হ্যারো, ইটন ও অক্সফোর্ডের ক্রাইস্টচার্চে শিক্ষা লাভ করেন। প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষায় তাঁর যথেষ্ট দখল ছিল। অনেক বছর পার্লামেন্টের ও ১৭৯৫ সাল থেকে নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য থাকার পর ১৭৯৮ সালের ১৮ মে ৩৭ বছর বয়সে তাঁকে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করা হয়। ওয়েলেসলীর সাত বছর শাসনভার ভারতে ব্রিটিশ শক্তি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
তাঁর নীতি ছিল ভারত থেকে সর্বপ্রকার ফরাসি প্রভাব দূর করা এবং ব্রিটিশদেরকে উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করা। তাঁর উদ্দেশ্য তিনি যুদ্ধের মাধ্যমে কিংবা শান্তিপূর্ণ অধিকারের দ্বারা বাস্তবায়িত করেছেন।
তিনি হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে পরিবর্তন করেন এবং অধীনতামূলক মিত্রতার নীতি গ্রহণ করেন। এ নীতি অনুসারে ভারতীয় রাজ্যসমূহ ব্রিটিশ নয় এমন ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত, তাদের রাজ্যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি অংশকে ভরণপোষণ ও ব্রিটিশদের নিকট বৈদেশিক বিষয়াবলি সমর্পণ করার মাধ্যমে ব্রিটিশদের নিরাপত্তার অধীনে আসতে বাধ্য হয়। এর বিনিময়ে কোম্পনি এ রাজ্যগুলির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা এবং তাদেরকে বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার অঙ্গীকার প্রদান করে।
মারাঠাদের দ্বারা দুর্বল হয়ে পড়া হায়দ্রাবাদের নিজাম অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণ করেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ব্রিটিশদের অধীনমিত্রে পরিণত হন। মহীশুরের টিপু সুলতান এটা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন এবং ওয়েলেসলী তাঁর বিরুদ্ধে চতুর্থ মহীশুরের যুদ্ধ পরিচালনা করেন। টিপু প্রবলভাবে প্রতিরোধ করেন কিন্তু ব্যর্থ হন। তাঁর রাজ্যের একটি বৃহৎ অংশ ব্রিটিশ ভূখন্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। হায়দার আলী মহীশূরের যে পুরাতন রাজ পরিবারকে উৎখাত করেছিলেন সে রাজবংশের এক সন্তানকে অধীনতামূলক মিত্রতার প্রচলিত শর্ত অনুযায়ী ওয়েলেসলী নিজ হেফাজতে আনেন।
ওয়েলেসলী উপলব্ধি করেছিলেন যে, মারাঠাগণ যতদিন অধীনতার আওতায় না আসবে ততদিন ভারতে ব্রিটিশদের সর্বোচ্চ অবস্থান সুসংহত হবে না। কিছুটা ইতস্তত করার পর বেসিনের চুক্তির মাধ্যমে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও অধীনতামূলক মিত্রতা গ্রহণ করেন। কিন্তু অন্যান্য মারাঠা নেতা এটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করলে ওয়েলেসলী তাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মারাঠা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি ভোঁশলে, সিন্ধিয়া ও শেষ পর্যন্ত হোলকারের ভূখন্ডের বৃহৎ অংশসমূহ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিকারে নিয়ে আসেন, এবং এভাবে দেশব্যাপী ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
একের পর এক তিনি সুরাট, তাঞ্জোর ও কর্ণাটকও নিজ দখলে আনেন। কুশাসনের অভিযোগে তিনি অযোধ্যার নওয়াবকে তাঁর রাজ্যের কিছু এলাকা ব্রিটিশদের নিকট সমর্পণ করতে এবং সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করেন। কিন্তু আরও আগ্রাসন ও জবরদখলের জন্য তাঁর নীতি স্বদেশের কর্তৃপক্ষকে বিহবল করে এবং ১৮০৫ সালে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়।
তাঁর শাসনামল শেষ হলে ওয়েলেসলী ব্রিটিশদেরকে ভারতে পুরাদস্ত্তরভাবে সর্বোচ্চ শক্তি হিসেবে রেখে যান। তিনি একজন ভাল প্রশাসকও ছিলেন; তিনি অসামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজটি পরে ভারতীয় ভাষাসমূহ, বিশেষ করে উর্দু, সংস্কৃত ও ফারসিতে রচিত সাহিত্যকর্মের জন্য বিখ্যাত হয়।
তিনি রবিবারকে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। অবসর গ্রহণ করার পর ভারতে তাঁর আগ্রাসনমূলক নীতির (বিশেষত অযোধ্যায় তিনি যে নীতি অবলম্বন করেছিলেন) জন্য তিনি সমালোচিত হন। ১৮৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ওয়েলেসলীর মৃত্যু হয়।
ওয়েলেসলির অগ্রসর নীতি এর সাফল্য নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও দেখুনঃ