আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ এস আই গ্রিস। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
এস আই গ্রিস
এস আই গ্রিস
সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ওয়ার
অন্যান্য দেশের অবস্থা তখন তত ভালো না। ইতোমধ্যে জাপানিরা বার্মা (মায়ানমার) দখল করে ভারত আক্রমণ করে এবং আসামে ঢুকে পড়ে। ১৬১ ভারতীয় পদাতিক বাহিনীকে বার্মা থেকে আসামের কোহিমায় এগিয়ে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়।
উদ্দেশ্য অগ্রগামী জাপানিদের বাধা দেওয়া। ৫ম ভারতীয় ডিভিশনের বাকি সৈন্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় আসামের ইম্ফলে যাবার জন্য। কোহিমাতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে জাপানিদের সাথে আমাদের ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
জাপানিদের প্রচুর ভারী মর্টার এবং ভারী কামান ছিল, যেগুলো তারা হাতি দিয়ে বয়ে আনে। জঙ্গল যুদ্ধে ছিল তারা অভিজ্ঞ, তারা দক্ষতা ও সাহসের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে। তারা আমাদের ওপর অবিরাম চাপ সৃষ্টি করে অবস্থার পরিবর্তন ও সাঁড়াশি হামলা চালিয়ে।
জাপানিদের অগ্রসর হবার একমাত্র রাস্তাটি, ছিল আমাদের নিয়ন্ত্রণে। গর্তে অবস্থান করার আগে আমাদের ওপর মর্টার ও কামানের গোলাবর্ষণ করে অনেক ক্ষতি করা হয়। আমাদের জীবিত সৈন্যরা গর্তে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে এবং যোগাযোগ রক্ষা করে চলে নিজেদের মধ্যে।

আমাদের চেয়ে জাপানিরা আশেপাশের উঁচু পাহাড় গুলো দখল করে নেয়। তারা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে এবং প্রচুর গুলি করে। রাতের অন্ধকারে আমাদের তৎপরতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেকটা সীমাবন্ধ হয়ে পড়ে।
আমাদের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার ওয়ারেন ছিলেন সাহসী ব্যক্তি। তিনি আমাদের শিখিয়ে ছিলেন যে, নিষ্ক্রিয়তা হচ্ছে মৃত্যুর সমান। তাই আমরা টহল, চোরাগুপ্তা হামলা ও নজরদারির মাধ্যমে আমাদের সৈন্যদের মনোবল জোরদার করে তুললাম।
প্রায় এক সপ্তাহ পর আক্রমণের তীব্রতা অনেকটা কমে যায়। তবে অব্যাহত থাকে অবরোধ। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি জাপানি রসদবাহী সৈন্যদলের ওপর হামলা চালানোর। আমরা বেশ সফল হই। হামলায় ১০ জনের সবাই নিহত হয়।
শেষমেষ আমাদের উদ্ধার করার জন্য ২য় ব্রিটিশ ডিভিশন এগিয়ে আসে এবং ১৩ দিন পর অবরোধ ভেঙে পড়ে। ব্রিগেডিয়ার ওয়ারেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তার সৈন্যদের মোতায়েন করেছিলেন এবং চমৎকারভাবে আত্মরক্ষামূলক কৌশল গ্রহণ করেছিলেন।
সীমিত সম্পদ নিয়ে তিনি কোহিমায় ১৩ দিন জাপানিদের অগ্রাভিযান প্রতিহত করতে সক্ষম হন এবং এ অঞ্চল দখলে জাপানিদের আশা একেবারে গুঁড়িয়ে দেন। পুরস্কার হিসেবে তাকে ‘ডিএসও’ প্রদান করা হয়।
জাপানিরা ভারতের অভ্যন্তরে আরো অগ্রাভিযানের ঝুঁকি উপলব্ধি করতে পেরে তাদের পরিকল্পনা ত্যাগ করে এবং আসাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে সুশৃঙ্খলভাবে। তারা সেখান থেকে সরে যায়।
আরও দেখুন: