[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ  আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।

আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা

 

আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা

 

আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা

ঢাকা থেকে বন্দী হয়ে ভারত চলে এলাম ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের দিকে 1 তারপর ক্যাম্পের ছোটো ও বন্দি পরিবেশে ২৮ মাস কেটে গেল। জুলফিকার আলী ভুট্টো যুদ্ধবন্দিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব ঘটানোর ব্যবস্থা করেন।

পূর্ব পাকিস্তানের বিয়োগান্ত ঘটনায় তার ভূমিকা এতো বিশাল ছিল যে, তিনি তার এ ভূমিকা গোপন রাখার জন্য যুদ্ধবন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চান নি। তিনি মনে করতেন যে, যুদ্ধবন্দিদের যতোদিন ভারতের ক্যাম্পে রাখা যাবে ততোদিন তার ঘৃণ্য কার্যকলাপ প্রকাশ পাবে না।

জাতিকে বোকা বানাতে যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠাতে ভারতকে রাজি করানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের কাছে অনুরোধ জানাতে তিনি একটি মহিলা প্রতিনিধি দলকে বিদেশে পাঠান। এ মহিলা প্রতিনিধি দলে কারো কোনো রাজনৈতিক মর্যাদা ছিল না।

এটা জাতির সাথে বাস্তবিকভাবে একটি ঠাট্টা করা সত্ত্বেও কেউ এর সামান্যতম প্রতিবাদ করেন নি। জুলফিকার আলী ভুট্টো যদি এ ব্যাপারে আন্তরিক হতেন তাহলে তিনি তার পরিবারের একজন সদস্যকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতে পারতেন ।

এ কথা মনে রাখা উচিত যে, মিসেস গান্ধী তার দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য নিজেই বিদেশ সফরে যেতেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো আরেকটি ছেলে মানুষি করেন। তিনি পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে রাজি করাতে ভারতীয় চলচ্চিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে এ মর্মে অনুরোধ জানিয়ে তাদের কাছে চিঠি লিখতে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পীদের আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দানে আমি শুধু অভিনেতা মোহাম্মদ আলীর নামই শুনেছি, যিনি রাজকাপুরকে পুরনো বন্ধু হিসেবে তার ডাক নাম ধরে ডাকতেন।

একটি জাতির বীর যোদ্ধাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এর চেয়ে সস্তা ও অমর্যাদাকর উপায় আর হতে পারে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধী কেন জুলফিকার আলী ভূট্টোর পরিকল্পনায় সায় দেন এবং আমাদেরকে স্থায়ীভাবে না হলেও দীর্ঘদিন ভারতে রাখতে রাজি হন।

ভারতে আমরা ছিলাম ব্যারাকে। অন্যদিকে, ভারতীয় সৈন্যরা বাস করতো তাঁবুতে এবং অন্যান্য অস্থায়ী বাসস্থানে। ভারতীয়রা আমাদেরকে খাওয়াচ্ছিল এবং নামমাত্র হলেও বেতন দিতো। এসব ব্যয় মোটেও সামান্য ছিল না। আমরা ছিলাম শ্বেতহস্তীর মতো। বিনিময়ে আমরা ভারতকে কিছুই দিই নি। কিন্তু কেন? ভারত কেন আমাদেরকে পুষতে গেল? ভারতীয়রা প্রচণ্ড প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ইন্টার্ন গ্যারিসনের তৎপরতা দেখেছে।

ভারতীয়রা যুদ্ধ করেছে এমন এক অনুকূল পরিবেশে ইতিহাসে যা কখনো কোনো সেনাবাহিনীর ভাগ্যে জোটে নি। তবু তারা তাদের মিশনের একটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারে নি। ইন্দিরা গান্ধী চান নি যে, যুদ্ধ করার মানসিকতা ও সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যরা দেশে ফিরে যাক।

যুদ্ধের জন্য অনুপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতীয় হেফাজতে তাদের পচিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। মিসেস গান্ধী কোনো এক ঘটনায় বলে ফেলেছিলেন যে, পাকিস্তানের তিনটি ক্র্যাক ডিভিশনকে তিনি পাকিস্তানে ফিরে যেতে দিতে পারেন না। মেজর জেনারেল লক্ষণ সিং লিখেছেন :

‘পাকিস্তানের পদাতিক বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে লড়াই করেছে। তারা আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রদর্শন করেছে এবং তাদের জুনিয়র অফিসার ও নন- কমিশন্ড অফিসারগণ দক্ষতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা ভূমি ও অস্ত্রশস্ত্রেরও চমৎকার সদ্ব্যবহার করেছে।

(দ্য ইন্ডিয়ান সোর্ড স্ট্রাইকস ব্যাক) এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি প্রশ্ন দাঁড়ায়, যদি জুলফিকার আলী ভুট্টো আমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে চান নি এবং মিসেস গান্ধীও আমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে চান নি, তাহলে আমরা দেশে ফিরলাম কীভাবে?

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত তার কোনো মর্যাদা ছিল না। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের লক্ষ্যে লাহোর দ্বিতীয় ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হয় এবং এ সম্মেলনের অজুহাতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রয়োজন ছিল জাতিসংঘের সদস্য পদ। ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশকে সদস্য করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে চীন ভেটো প্রয়োগের হুমকি দেয় এবং জানিয়ে দেয় যে, ভারতে বন্দি পাকিস্তানি সৈন্যদের মুক্তি দেওয়া না হলে সে বাংলাদেশেকে জাতিসংঘের সদস্য হতে দেবে না।

চীনের এ হুমকিতে ভারত যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। (দৈনিক ডন, করাচি, ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৩)। সুতরাং ভারত আমাদেরকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোকে তা মেনে নিতে হয়।যখন জানাজানি হলো যে আমরা দেশে যাচ্ছি, তখন জেনারেল শাহ বেগ সিং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, অফিসারদের দুটি দলে পাঠানো হচ্ছে কি-না।

আমি তাকে জানালাম যে, মেজর জেনারেল ফরমান, অ্যাডমিরাল শরীফ ও এয়ার কমোডর ইনামকে প্রথম ব্যাচে পাঠানো হবে এবং আমি ও আমার ডিভিশনাল কমান্ডারগণ যাবো দ্বিতীয় ব্যাচে। আমি তাকে আরো জানালাম যে, গ্যারিসনের কমান্ডার হিসেবে আমি সবার পরে পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করবো।

এর কিছুদিন পর শাহ বেগ সিং আমার কাছে এসে বললেন যে, দিল্লির জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স আমার প্রস্তাবের সাথে একমত নয়। কারণ, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল টিক্কা খান, জেনারেল ফরমান ও মজিদকে অন্যান্য জেনারেলদের আগে পাঠাতে বলেছেন।

তিনি আমাকে আরো জানান যে, তিনি তার নিজস্ব সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন যে, আলোচনা ও ব্রিফিং-এর জন্য এ দুই জন জেনারেলকে টিক্কা খানের প্রয়োজন। ফরমানকে সবার আগে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে টিকার আগ্রহের কারণ হচ্ছে যে, ফরমান ছিলেন তারই মতো একজন আর্টিলারি অফিসার এবং তিনি ২৫শে মার্চ বাঙালিদের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে টিক্কাকে সহায়তা করেছিলেন।

মেজর জেনারেল হাজী মজিদ ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হামিদের (চতুর্থ কোর কমান্ডার) ছোটো ভাই। জেনারেল হামিদ লাহোরে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানে অফিসারদের প্ররোচিত করেছিলেন। যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে কাজী মজিদের ভূমিকা চরম বিশৃঙ্খলপূর্ণ হওয়ায় আমি তাকে কমান্ড থেকে অপসারণ করেছিলাম। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কাউকে তার জায়গায় পাঠানো সম্ভব হয় নি। তবে আমি আমার সিদ্ধান্তের কথা তাকে অবহিত করেছিলাম।

এটা স্পষ্ট যে, এ দুই জন সন্দেহভাজন জেনারেলকে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের ইশারায় আমার বিরুদ্ধে সাক্ষাদানের জন্য তাদেরকে প্রকৃত করার জন্য একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছিল। ফরমান জাতিসংঘ সিগনাল কেস’-এ জড়িত ছিলেন। তিনি আমার এবং গভর্নরের অনুমতি ছাড়া ফরাসি, ব্রিটিশ, রুশ ও মার্কিন প্রতিনিধির পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

জেনারেল নজর যে রাতে আক্রান্ত হন সে রাতে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। তাকে ১৬তম ডিভিশনের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলাম আমি। রুশ ও ভারতীয়দের সাথে যোগাযোগ থাকায় তিনি একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন।

মজিদ যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমার নির্দেশ অমান্য করেন, তিনি তার সৈন্যদের একটি অংশকে মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ে রেখে ভৈরব সেতু উড়িয়ে দেন। ভৈরব সেতুর প্রতি তখন আদৌ কোনো হুমকি ছিল না। তাকে নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান গ্রহণের জন্য ঢাকা পিছু হটার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি।

এ নির্দেশ অগ্রাহ্য করেন। শত্রুরা যখন মেঘনা নদীর এপারে হেলিকপ্টার থেকে সৈন্য নামায় তখন তিনি তাদের বাধা দেন নি। শত্রুরা ছিল তার আর্টিলারির পাল্লার আওতায়। এসব ক্ষমাহীন অপরাধ সত্ত্বেও ফরমান এবং কাজী মজিদকে সবার আগে ভারতের বন্দিশালা থেকে বের করে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

ফরমান জব্বলপুরে আমাদের শিবিরের গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল রাখাবার সৌজন্যে পশ্চিম পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি টেলিফোন করেন। আমাদেরকেও টেলিফোন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফরমান ছাড়া আমাদের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করেন নি।

শিবিরের একজন স্টাফ আমাকে জানায় যে, ফরমান রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে কারো সাথে কথা বলেছেন। শেষ পক্ষকালে কর্নেল রান্ধাবা নিয়মিত ফরমান এবং মজিদের কাছে আসতেন। ফরমান ও মজিদ মানিক জোড়া হয়ে এক সাথে থাকতেন, একসাথে হাঁটতেন এবং দুই জন একান্তে সারাক্ষণ কথা বলতেন ।

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল দ্রুত। আমাদের স্যুটকেসে মালপত্র গোছানো শুরু হয়। প্রত্যেকের মুখে তৃপ্তির হাসি, দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা ও দুর্দশার পর তারা তাদের পরিবারের সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে। পাকিস্তানে পৌঁছেই ফরমান এবং মজিদ জেনারেল টিক্কার সাথে হাত মেলান।

কিন্তু এ দুই ব্যক্তি আমাকে, তাদের সহযোদ্ধাদের এবং ইন্টার্ন কমান্ডকে অপমানিত করতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা মুছে যাবার নয়। তারা যে ক্ষতি করছেন তা অপূরণীয়। ফরমানের ক্যারিয়ারের কতোটুকু উন্নতি হয়েছে তা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে।

মজিদকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লোভনীয় চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়। কিন্তু যারা চরম দুঃসময়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গনে প্রবল পরাক্রমশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের প্রত্যেককে অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করা হয়।

ফরমান ও মজিদের তুলনায় অন্যান্য জেনারেলগণ উঁচু নৈতিকতার পরিচয়দিয়েছেন। বেলুচিস্তানে পিএনএ’র নেতৃত্বে বিদ্রোহ শুরু হলে আমি জুলফিকার আলী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ভূমিকা উন্মোচন করি। ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি কয়েকজন জেনারেলকে আমার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে উস্কানি দেন।

জুলফিকার আলী ভুট্টোর আত্মীয় ও মন্ত্রী মমতাজ জুলফিকার আলী ভুট্টো জেনারেল আবদুল হামিদ ও জেনারেল মিটার সাথে দেখা করেন এবং তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে চাপ দেন। তাদেরকে পুরষ্কৃত করার লোভও দেখানো হয়। কিন্তু তারা সরাসরি অস্বীকৃতি জানান।

অফিসারদের মধ্যে কী বৈসাদৃশ্য। তাদের কেউ কেউ কতো স্বার্থপর ও নীচ এবং কেউ কেউ কতো মহৎ ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। হামিদ ও মিটা ছিলেন জান্তার অংশ। কিন্তু তারা আমার বিরুদ্ধে যান নি। অন্যদিকে, ফরমান ও কাজী মজিদ ছিলেন আমার কমান্ডে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দুই জন আমার বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়।

ভারত থেকে ফিরে আসার পর জেনারেল পীরজাদা আমাকে জানান যে, জুলফিকার আলী ভুট্টো আমাদের কারো বিচার করবেন না। তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের কোনো অফিসার অথবা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার গায়ে আঁচড় কাটলে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যাবে।

সামরিক আদালতে কারো বিচার হয় নি। শুধু আমাকে ও আমার চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বাকির সিদ্দিকীকে বলির পাঠা বানানো হয় এবং সামরিক আদালতে আমাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয় নি।

অবশেষে উপস্থিত হয় মুক্তির দিন। আমাদের মুখে হাসি এবং অন্তরে আনন্দের বন্যা। আমরা পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বিশেষ ট্রেনে ওঠার জন্য জব্বলপুর রেল স্টেশনের পথে রওনা হই। আমাদের শিবিরের কর্মচারী ও জব্বলপুর ক্যান্টনমেন্টের সিনিয়র অফিসারগণ আমাদের বিদায় জানান।

জেনারেল শাহ বেগ সিং আমাকে বিদায় জানাতে এসে বলেন, ‘আমি দুঃখিত স্যার। আপনার সুনাম ধ্বংস করা হয়েছে। তারা ১৯৭১ সালের বিপর্যয়ের গোটা দোষ আপনার ও আপনার কমান্ডের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

আমি বললাম, আপনাকে ধন্যবাদ। আল্লাহই মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। মানুষ তার ইচ্ছায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে না।’ এ কথা বলে আমি বিদায় নিলাম। গার্ড সবুজ পতাকা উড়িয়ে সংকেত দেয়। ট্রেন ধীরে ধীরে পাকিস্তানের পথে এগিয়ে যেতে থাকে ।

ট্রেন সামনের দিকে এগিয়ে যাবার সময় জলপুরের বিজলি বাতিগুলোকে হাজার তারার মতো মনে হলো। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে বাতিগুলো। ট্রেনের বাতি ছাড়া সবকিছু অন্ধকারে তলিয়ে যায়। এ অনুজ্জ্বল বাতিতে রেলওয়ের আশপাশের খানিকটা দেখা যাচ্ছিল।

নীরব প্রকৃতির ধ্যানে যেনো ব্যাঘাত ঘটছিল। কম্পার্টমেন্টে আলো-আধারির মাঝে আমাদের আনন্দ ও পরিতৃপ্তি বার বার হোঁচট খাচ্ছিল। জুলফিকার আলী ভুট্টো ইয়াহিয়া খানকে অপসারণ করে তার উচ্চাকাক্ষা চরিতার্থ করেছেন।

তিনি পূর্ব পাকিস্তানকে জ্বলতে পুড়তে দেখেছেন এবং এ বিপর্যয় লক্ষ্য করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের ছাই ভস্মের ওপর তিনি তার ভাগ্য গড়েছেন। এ ছাই-ভস্ম থেকে তিনি মুকুট তুলে মাথায় পরেছেন। তার ভাগ্যে লেখা হয়েছিল যে, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা হবেন।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

মানব ইতিহাসে এমন লোক খুব কমই আছেন যিনি ইতিহাসকে এতো জঘন্যভাবে বিকৃত করেছেন। তিনি অকুতোভয় ইন্টার্ন কমান্ডকে কলঙ্কিত করার জন্য বানানো কাহিনি ও মিথ্যাচার দিয়ে ইতিহাসকে সাজিয়েছেন।

শুধু ক্ষমতার লিপ্সা থেকেই তিনি এ কাণ্ড করেছেন। ভ্রান্ত কর্মকাণ্ড এবং পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়ার পেছনে তার অনস্বীকার্য ভূমিকা আড়াল করার জন্য তার কাউকে বলির পাঁঠা বানানোর প্রয়োজন ছিল।

তিনি একজন সংহারক থেকে একজন নির্মাতা, উগ্র আত্মকেন্দ্রিক দেশপ্রেমিক থেকে একজন বিনম্র ব্যক্তি এবং সামস্ত প্রভু থেকে দরিদ্র জনগণের বন্ধু হিসেবে পরিচিতি হতে চেয়েছিলেন। তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের ওপর পুরো দোষ চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন।

যে ইস্টার্ন কমান্ডের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেই ইস্টার্ন কমান্ড গেরিলা যুদ্ধে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, বিরাট বাধা-বিপত্তি ও নজিরবিহনীর প্রতিকূলতার ভেতর লড়াই করেছে, সামান্য শক্তি নিয়ে সাহস ও প্রত্যয়ের সাথে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করেছে। তাদের কোনো আরাম-আয়েশ, বিশ্রাম ও খাদ্য ছিল না।

কোনো দিক থেকে সহায়তা পাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। না। তাদেরকে তাদের নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট পরিত্যাগ করেছিল এবং প্রাদেশিক সরকারও তাদের ত্যাগ করেছিল। কিন্তু তাদের সাহস, তাদের আত্মত্যাগ, তাদের অসামান্য অবদান সবকিছু ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭৪ সালের ৩০শে এপ্রিল খুব ভোরে ট্রেন ওয়াগাহ পৌঁছে। ওয়াগাহতে ভারতীয়রা সীমন্তের খুব কাছাকাছি তাঁবু ফেলেছে। পাকিস্তানে প্রবেশ করার আগে আমাদের চা পান করানো হয়। আমি সবার শেষে পাকিস্তান ভূখণ্ডে প্রবেশ করি। আমাদের বন্দিদশার কাল ছিল ২৮ মাস। পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩ বছর।

ওয়াগাহতে পাকিস্তান সীমান্তে সুদৃশ্য শামিয়ানা টানানো হয়। সেখানে সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল কাজী মজিদের বড়ো ভাই চতুর্থ কোর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হামিদ।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল টিক্কা খান রহস্যময় কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। আমি পাকিস্তানে প্রবেশ করা মাত্র আনজুম নামে একজন ব্রিগেডিয়ার আমাকে অভিবাদন করেন এবং বলেন, ‘স্যার, প্রেসের কাছে কোনো বিবৃতি দেবেন না।’

এরপর তিনি ‘১নং’ লেখা সম্বলিত প্রায় ৪ ইঞ্চি দীর্ঘ আয়তাকার একটি কার্ড বোর্ড বাড়িয়ে দেন। তিনি আমাকে এটি বুকে এঁটে নিতে বলেন যাতে ছবি তোলা যায়। আমি তখন জানতে চাই যে, এ ব্যবস্থা কি শুধু আমার জন্য, না অন্যান্যদের জন্যও। তিনি বললেন যে, এ ব্যবস্থা অন্যান্য জেনারেলদের জন্যও।

আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম যে, ইতোমধ্যে কারো ছবি তোলা হয়েছে কিনা এবং কে এ ধারণা দিয়েছেন। জবাবে তিনি জানালেন যে, অন্য কারো ছবি তোলা হয় নি। আমি জানতাম যে, এটা ছিল টিক্কার নির্দেশ। ভারতেও আমরা এ ধরনের অপমানের শিকার হই নি।

আমি খুব রেগে যাই এবং আনজুমকে আমার সামনে থেকে সরে যেতে বলি। ঠিকই তিনি সরে যান। তখন জেনারেল হামিদ আমার দিকে এগিয়ে আসেন এবং পত্রিকায় কোনো বিবৃতি না দিতে ও ভারতের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিশোধ নেবো এমন কোনো কথা বলতে নিষেধ করেন। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “এটা নতুন সরকারের নীতি।’

টিকার অনুপস্থিতি থেকে আমরা আমাদের প্রতি জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ও সরকারের মনোভাব আন্দাজ করতে সক্ষম হই। সত্যিই মর্মাহত হই আমি। তার সাথে বিভিন্ন সময় কাজ করেছি আমি এবং একে অপরকে ভালোভাবে চিনি।

হয়তো তিনি ইস্টার্ন কমান্ড এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার জন্য আমাকে দায়ী করেছেন। আমি কখনো চিন্তা করি নি যে, এতো পরে বিশেষ করে তিনি যখন সেনাবাহিনী প্রধান তখনো আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবেন।

সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তিনি তার জুনিয়রদের অভিভাবক ও রক্ষক। ভারতে যুদ্ধবন্দি হিসেবে চরম দুর্ভোগ সয়ে দেশে ফিরে এসেছি। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমার মতো একজন ব্যক্তির মনের অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

টিক্কার অনুপস্থিতিতে সরকারের অসন্তুষ্টি প্রকটভাবে ধরা পড়ে। জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্ধত্য ছিল বোধগম্য। কিন্তু টিকার দৃষ্টিভঙ্গি সন্দেহজনক । ভারতে আমাদেরকে জব্বলপুর সেনানিবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বিদায় জানান। কিন্তু আমার স্বদেশ আমার মাতৃভূমিতে আমাকে অভ্যর্থনা জানান আমার একজন জুনিয়র অফিসার।

কিছুদিন পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে টিকা খানের ভূমিকা। সশস্ত্র বাহিনী যাতে কখনো জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করার জন্য টিকা ও জুলফিকার আলী ভুট্টো উভয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে হেয় ও খাটো করার তোড়জোড় শুরু করেন।

হামুদুর রহমান কমিশন বাংলার কসাই টিক্কাকে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি দেয়। অথচ এর আগে এক ভারতীয় সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রক্তাক্ত সামরিক অভিযানের জন্য টিক্কাকে দোষারোপ করেছিলেন।

ওয়াগাহ অভিমুখী সব পথ পুলিশ অবরোধ করে রাখা সত্ত্বেও লাখ লাখ লোক আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সেখানে হাজির হয়েছিলেন। আমরা শামিয়ানার নিচে বিশ্রাম করার জন্য এলে হাজার হাজার লোক শ্লোগান দিতে থাকে, আমাদের গাজী জেনারেল নিয়াজিকে দেখতে দাও। দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি উপজাতীয় এলাকা থেকেও লোকজন এসেছিল। জনতার ভিড় দেখে জেনারেল হামিদ ভড়কে যান এবং সটকে পড়েন।

তিনি পুনরায় এলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তিনি কোথায় গিয়েছিলেন। তিনি বললেন, যে, ওয়াগাহ থেকে ৮ মাইল দূরে শালিমার গার্ডেন পর্যন্ত সকল রাস্তা লোকে-লোকারণ্য হওয়ায় গাড়ি নিয়ে লাহোর পৌছানো সম্ভব নয়। তাই আমাকে হেলিকপ্টারে করে লাহোর বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। লাহোরে এলাম।

আমার বাসভবনের বাইরেও জনতা ভিড় করে। আমি গাড়ি থেকে নেমে কারো কারো সাথে করমর্দন করি এবং বাদ-বাকিদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাই। অনেকে মিষ্টি, ফুলের মালা প্রভৃতি নিয়ে এসেছিল। উপহার সামগ্রীর পরিমাণ এতো বেশি ছিল যে, এগুলো রাখার জন্য আমাদেরকে একটি রুম খালি করে দিতে হয়। আমি ১০ দিন লাহোরে ছিলাম এবং প্রতিদিন আমার বাসভবনে প্রচুর লোকজন আসতো।

আমি মারি-ইন্দাস ট্রেনে মিয়ানওয়ালির পথে যাত্রা করি। লাহোর থেকে ট্রেন ছাড়ে রাত ৮টা প্রতিটি স্টেশনে আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য লোকজন ছুটে এসেছিল। সে রাতে ঘুমাতে পারি নি আমি। প্রতিটি স্টেশনে থামি এবং জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ি। ট্রেন মিয়ানওয়ালি জেলায় প্রবেশ করলে জনতার ভিড় আরো বেড়ে যায়। লোকজন ঢোল ও বাঁশি নিয়ে এসেছিল এবং আনন্দে নাচছিল।

ট্রেন মিয়ানওয়ালি স্টেশনে এসে থামে। কিন্তু সেখানে ছিল শুধু পুলিশ। এসপি এসে আমার সাথে করমর্দন করেন। আমি লোকজনকে স্টেশনে আসতে না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জেলা প্রশাসককে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “সরকারি হুকুম।

আমি তখন বললাম, ‘ডিসি সাহেব, আমি একজন আইন মান্যকারী নাগরিক এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন দায়িত্বশীল অফিসার। এটা বাড়াবাড়ি। লোকজনকে আসতে দিন। তিনি অক্ষমতা প্রকাশ করেন। আমি তখন তাকে বললাম যে, আমি অবশ্যই লোকজনের সাথে সাক্ষাৎ করবো।

আমি তাকে গোলযোগ এড়ানোর জন্য তার লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বললাম । কিন্তু তিনি আমার উপদেশ রক্ষা করেন নি। আমাকে যারা অভ্যর্থনা জানাতে এসেছিলেন তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসারও ছিলেন। আমার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তারা ছুটি নিয়েছিলেন।

আমি হাত দিয়ে ইশারা দিই তাদেরকে। মুহূর্তের মধ্যে তারা পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদের রাইফেল কেড়ে নেয়। আক্ষরিকভাবে তারা পুলিশকে লৌহ বেষ্টনীর বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আমার লোকজন সশস্ত্র হওয়ায় পুলিশ গুলি চালানোর সাহস পায় নি।

এরপর এসপি ও ডিসি ঘটনাস্থল থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। গোটা শহর আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এগিয়ে আসে। সেদিন কেউ কারো কাজে যায় নি, কেউ অফিস করে নি। কোনো দোকানপাটও খোলে নি। এখানে প্রতিদিন অসংখ্য লোক আমাকে দেখতে আসতো। অধিকাংশই ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লোক।

আমার জনপ্রিয়তা দেখে ভুট্টো ভয় পেয়ে যান এবং আমার সাথে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। জেনারেল হিসেবে প্রাপ্য সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তিনি আমাকে এক বছরের বেশি সময় সেনাবাহিনীতে রাখতে চেয়েছিলেন।

১০ দিন ছুটির পর হামুদুর রহমান কমিশনের জন্য রিপোর্ট তৈরি এবং জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সকে রিপোর্ট করার জন্য রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে আমাকে ডাকা হয়। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স আমার প্রতি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করে।

আমি তাদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য অথবা উৎসাহ পাই নি। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও গভর্নর মালিক এবং আমার হেডকোয়ার্টার্স ও জেনারেল হেডকোয়ার্টাসের মধ্যে যেসব বার্তা বিনিময় হয়েছিল সেগুলো দেওয়ার জন্য জেনারেল টিক্কাকে অনুরোধ করি।

তিনি এসব বার্তা আমাকে সরবরাহ করতে পারেন নি। কারণ, এগুলো ছিল জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে। আমি প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানের কাছেও আবেদন করি। তিনিও জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছ থেকে এসব দলিল উদ্ধার করতে। পারেন নি।

আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাবার পর আমরা আমাদের সকল রেকর্ড ধ্বংস করে ফেলি। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স ১৯৭১ সালের সংকটের ওপর বই লেখার জন্য। মেজর জেনারেল মুকিমকে সকল সুবিধা এবং আমাদের সকল দলিলপত্র সরবরাহ করে। আমি সেনাবাহিনীতে চাকরিরত থাকা সত্ত্বেও আমার রিপোর্ট তৈরিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগিতা পাই নি।

 

আমার পাকিস্তানে ফিরে আসা

 

পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি জনাব মোজাফ্ফর হোসেন আমার নিজের ও জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স এবং গভর্নর ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে কয়েকটি বার্তার কপি আমাকে দিয়েছেন। এসব কপি আমার রিপোর্ট তৈরিতে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। তার একটি বিরাট উদারতা এটা। এ জন্য তার প্রতি সব সময় আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।

আরও দেখুন:

Leave a Comment