আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়ঃ অনুমান সমূহ। যা ” দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান- এ এ কে নিয়াজি” বইয়ের অংশ।
অনুমান সমূহ
অনুমান
মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা এবং ভারতীয়দের পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে নিম্নোক্ত অনুমানগুলো পেশ করা হয়:
ক. এইচ-১
১. অভ্যন্তরে বিদ্রোহী তৎপরতা জোরদার।
ক. যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ব্যাহত।
খ. অসহযোগ আন্দোলন এবং আইন অমান্য।
গ. নির্বাচন এবং বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর বাধা।
২. ভূখণ্ড দখল এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ।
ইস্টার্ন সেক্টরে অগ্রাধিকার :
ক. সব সেক্টরে ভারতীয় পদাতিক এবং গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তা নিয়ে বিদ্রোহীদের সর্বাত্মক হামলা।
খ. ভারতীয় সৈন্যদের পূর্ণ সমর্থনে সীমান্তে হামলা এবং আমাদের একটির পর একটি বিওপি দখল।
গ. চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট সীমান্ত বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে দুর্বল স্পটে হামলা এবং যতটুকু সম্ভব ততটুকু ভেতরে প্রবেশ।
ঘ. বাংলাদেশ ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা ।
৩. বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ।
খ. এইচ-২ (সবচেয়ে বিপজ্জনক)
১. পূর্ণাঙ্গ ভারতীয় হামলা।
২. “এইচ-১’ ইতোমধ্যে এগিয়ে চলছে।
গ. এইচ-৩
১. ‘এইচ-১’ এক মাসের জন্য অথবা অনুরূপ।
২. স্পষ্ট ফলাফল পাওয়া না গেলে ‘এইচ-২’-এর দিকে এগিয়ে যাবে।

আমরা এ সুপারিশে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সকে সুস্পষ্টরূপে জানাই যে, পাকিস্তানের পক্ষে যে-কোনো হামলা চালানোর জন্য সর্বোত্তম সময় ছিল অক্টোবর অথবা মে-এর আগে এবং তা হতে হবে অবশ্যই মার্চের পর। সার্বিক অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পরিস্থিতির আলোকে আমরা সুপারিশ করি যে, ভারতের বিরুদ্ধে সফলভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আমাদের সামনে এটি উপায় খোলা রয়েছে।
ক. সৈন্যদেরকে লড়াইয়ের অবস্থানে প্রত্যাহার করা
এতে প্রকৃত সীমান্ত পরিত্যাগ করতে হবে এবং আশপাশের কতিপয় এলাকা অরক্ষিত অথবা কোনো রকমে ধরে রাখতে হবে। ভারতের নিয়মিত বাহিনীর সরাসরি সমর্থন নিয়ে বিদ্রোহীরা এ ধরনের এলাকায় ও ক্ষুদ্র পোস্টগুলোতে হামলা চালাবে।
এ ধরনের কয়েকটি এলাকা দখল করে বিদ্রোহী ও ভারতীয়রা বাংলাদেশ হিসেবে দাবি করতে পারে। শত্রুরা বড়ো ধরনের লড়াই এবং রক্তপাত ছাড়াই তাদের মিশন সফল করবে। আমাদের সকল শ্রম, কঠিন লড়াই, আত্মত্যাগ ও বিস্ময়কর সাফল্য বিফলে যাবে এবং পাকিস্তানের ভাঙন নিশ্চিত হয়ে উঠবে।
খ. সীমান্ত শক্তভাবে ধরে রাখা
অবশ্য এটা আমাদেরকে শক্তি যোগাবে এবং সফল হলে আমাদেরকে কোনো ভূমি হারাতে হবে না। কিন্তু এলাকার বিশালত্ব এবং সৈন্য, গোলা- বারুদ ও গতিশীলতার অভাবে এটা কৌশলগতভাবে উপযুক্ত নয়। আমার হাতে খুব সামান্য ভূখণ্ড থাকবে। কোনো রিজার্ভ, কোনো গতিশীলতা অথবা সচলতা থাকবে না এবং তৎপরতার সুযোগ থাকবে সীমিত পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি রয়েছে।
এতে অহেতুক প্রাণহানি ঘটবে। বিদ্রোহী ও ভারতীয়রা আমানের ক্ষতি করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, আমরা ভারতীয় ভূখণ্ডে গোলাগুলি ও হামলা করার অবস্থানে থাকব। ফলে ভারতীয়রা তাদের ট্যাংক ও কামানের মজুদ রক্ষায় সৈন্য পাঠাতে বাধা হবে। এতে আমি আমার অবস্থান ধরে রাখার সুযোগ পাবো এবং নিজেদের। শরণার্থীদের নিয়ে ভারতীয়রা হাবুডুবু খাবে
গ. পর্যাপ্ত অতিরিক্ত সৈন্য রাখা
অগ্রবর্তী অবস্থান এবং অভ্যন্তরে শক্তিশালী হওয়ার জন্য ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে। নিয়মিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অঘোষিত যুদ্ধে দক্ষতার সাথে লড়াই এবং দেশের অভ্যন্তরে লড়াইয়ে বিদ্রোহীদের নির্মূল করাতে হবে ।
জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স তৃতীয় প্রস্তাবে সম্মত হয়। কারণ, তাদের অভিমত ছিল যে, প্রথম দুটি উপায় বা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে শত্রু তার মিশন হাসিলে চমৎকার অবস্থানে পৌঁছে যাবে এবং পুরো পরিস্থিতি আমাদের বিপক্ষে চলে যাবে।
জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স আরো অভিমত প্রকাশ করে যে, পশ্চিম রণাঙ্গনে উভয়পক্ষের সৈন্য সংখ্যার একটি অনুকূল অনুপাত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড না হারিয়ে পূর্ব রণাঙ্গনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভারতীয় সৈন্যকে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় ফ্রন্ট থেকেই চূড়ান্ত হামলা করা হবে।
আমরা জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের এ অভিমত মেনে নিই এবং সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিই যে, ভারতীয় হামলা মোকাবিলা এবং ভারতীয়দের জন্য কষ্টকর অবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত সৈন্য পাঠানো এবং আমাদের ঘাটতিগুলো পূরণ করা খুবই জরুরি। জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স এতে সম্মত হয়।
আরও দেখুন: